বিএনপি নেতা ও সাবেক ফুটবল তারকা আমিনুল হক বিসিবি নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছেন এবং কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাম্প্রতিক নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন এবং কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতে চাপ প্রয়োগ করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পল্টনের শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত “জিয়া আন্তঃভলিবল টুর্নামেন্ট”-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিনুল হক বলেন, “বিসিবির নির্বাচনে সরকারের স্পষ্ট হস্তক্ষেপ হয়েছে। আমরা প্রমাণসহ জানি— ক্রীড়া উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে অনেক কাউন্সিলরকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন এবং নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে বলেছেন। এটি অত্যন্ত অনৈতিক ও অবৈধ একটি কাজ।”
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরও বলেন, “আমার কাছে তথ্য এসেছে যে, কিছু কাউন্সিলরকে সরাসরি ডেকে নিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ বলেছেন, তাদের চাকরি বা ব্যবসায়িক ক্ষতির ভয় দেখানো হয়েছে যদি তারা নির্দেশ অনুযায়ী ভোট না দেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, “১৮ সেপ্টেম্বর বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম) জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়ে অ্যাডহক কমিটির মধ্য থেকে কাউন্সিলর মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকরা হাইকোর্টে রিট করেছেন। যদিও নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, আদালতের রায় অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি আদালত চিঠিটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন, তাহলে নির্বাচনের বৈধতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।”
বিসিবির নির্বাচনে টাকার প্রভাবের কথাও তুলে ধরেন আমিনুল। তার ভাষায়, “আমার কাছে প্রমাণ আছে যে, কিছু প্রার্থী নির্বাচনে আর্থিক লেনদেন করেছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বোর্ড পরিচালকরা অর্থের বিনিময়ে নির্বাচিত হতে পারেন। এতে করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন দেখা যাচ্ছে, বিসিবির নির্বাচনে যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মীদের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। এই পুরো প্রক্রিয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
আমিনুল হক জোর দিয়ে বলেন, “এটি কোনো সাধারণ নির্বাচন নয়— এটি বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি করেছে। মানুষ এখন প্রশ্ন করছে, আসলে ক্রিকেট বোর্ড কার হাতে পরিচালিত হচ্ছে? এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের ক্রিকেট ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়বে।”
শেষে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “বিসিবি নির্বাচন নিয়ে সাপ-বেজির খেলা বন্ধ করতে হবে। যদি সরকার সত্যিই ক্রিকেটের উন্নয়ন চায়, তবে ক্রীড়া উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।”