বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন শেষ হয়েছে মাত্র এক দিন আগে। এই নির্বাচনে সভাপতি এবং দুই সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বোর্ডে এসেছে চমকপ্রদ পরিবর্তন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে মনোনীত দুই পরিচালকের একজনের নাম হঠাৎ করে বদলে গেছে, যা ক্রিকেট অঙ্গনে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
প্রথমে এনএসসি থেকে ইশফাক আহসান ও ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিককে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইশফাক আহসানের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত এনএসসি ইশফাক আহসানকে পরিচালক পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন দেশের কর্পোরেট অঙ্গনের অন্যতম সফল নারী রুবাবা দৌলা। এনএসসি নতুন মনোনয়ন হিসেবে রুবাবা দৌলাকে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে পাঠিয়েছে, যা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর হলেও ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
রুবাবা দৌলা বর্তমানে ওরাকল বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি দেশের শীর্ষ দুই টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ও এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দীর্ঘ সময় সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় এবং ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি সামাজিক প্রভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কর্পোরেট জগতের পাশাপাশি রুবাবা দৌলার রয়েছে ক্রীড়া প্রশাসনে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার সময়ে ব্যাডমিন্টনের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিকসের বোর্ড সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন, যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
রুবাবা দৌলার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে যোগদান অনেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তার কর্পোরেট জগতের অভিজ্ঞতা এবং ক্রীড়া প্রশাসনে দক্ষতা ক্রিকেটের বিকাশ ও পেশাদার ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন বিশ্ব অঙ্গনে নিজেকে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে চাইছে। এমন সময়ে রুবাবা দৌলার মতো একজন পেশাদারের বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি বিসিবির পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, তার যোগদান নারী নেতৃত্বের নতুন দিগন্তও উন্মোচন করবে এবং ক্রিকেট প্রশাসনে বৈচিত্র্য ও পেশাদারিত্বের সংমিশ্রণ ঘটাবে।
এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর থাকবে রুবাবা দৌলার দিকে। তার নেতৃত্ব ও অভিজ্ঞতা কীভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় – সেটিই এখন সময়ের অপেক্ষা।