close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হলেও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে দিনটি পালন করা হয় ভিন্নমাত্রায়। এটি শুধুই ভালোবাসার দিবস নয়, বরং প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার প্রতিজ্ঞার দিন— ‘সুন্দরবন দিবস’।
কেন ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস?
২০০১ সালের এই দিনে দেশের ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। মূল লক্ষ্য ছিল সুন্দরবনের পরিবেশগত গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
সুন্দরবন: পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বন
সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের গর্বই নয়, এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯২ সালে এটি রামসার সাইট স্বীকৃতি পায়। জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যের কারণে সুন্দরবনকে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৩১.১৫% জলাভূমি, যা অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম।
👉 জীববৈচিত্র্য:
✅ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা
✅ ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল
✅ ১৩ প্রজাতির অর্কিড
✅ ২৭০ প্রজাতির পাখি
✅ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী
✅ ২১০ প্রজাতির মাছ
✅ ছয় প্রজাতির ডলফিন (যার মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিও রয়েছে)
বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির, কিং কোবরা, এবং নানা প্রজাতির উভচর প্রাণী এই বনকে করেছে অনন্য।
সুন্দরবনের সংকট: ধ্বংসের মুখে কি এই ঐতিহ্য?
সুন্দরবনের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। কেবল প্রকৃতির বিপর্যয় নয়, মানুষের লোভ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, এবং পরিবেশ দূষণ এই বনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
🔥 বিপদের কারণসমূহ:
❌ সুন্দরীসহ বিভিন্ন লবণ-সহিষ্ণু গাছ কমে যাচ্ছে
❌ বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে জলজ প্রাণী হুমকিতে
❌ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী শিকার অব্যাহত
❌ নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য সংকটে
❌ প্লাস্টিক দূষণ বৃদ্ধি
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, একসময় সুন্দরবনে ৪০০ প্রজাতির পাখি ছিল, যা এখন কমে ২৭০টিতে নেমে এসেছে!
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবন রক্ষার শপথ
সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে খুলনার সুন্দরবন একাডেমি এবং ইয়ুথ ফর দ্য সুন্দরবন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
📌 প্রধান কর্মসূচি:
✔️ সচেতনতা মূলক র্যালি
✔️ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
✔️ সিগনেচার ক্যাম্পেইন
✔️ সাইকেল র্যালি
✔️ আলোচনা সভা
✔️ মানববন্ধন
এই আয়োজনগুলোর মূল উদ্দেশ্য— "বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, সুন্দরবনকে বাঁচান!"
বিশেষজ্ঞদের মতামত উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শুভ্র শচীন বলেন,
"সুন্দরবন আমাদের জন্য মা-বাবার মতো। এটি আমাদের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। যারা সুন্দরবন ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।"
খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন,
"বনের প্রকৃত রক্ষক প্রকৃতি নিজেই। তবে মানুষের সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সুন্দরবন রক্ষা সম্ভব নয়।"
শেষ কথা: আমাদের করণীয়
✅ প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণ বন্ধ করতে হবে
✅ বনের অবৈধ শিকার ও কাঠ পাচার রোধ করতে হবে
✅ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে
✅ স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে
প্রকৃতিকে ভালোবাসতে চাইলে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন! ভালোবাসা দিবসে শুধু প্রিয়জন নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনটির প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করুন। সুন্দরবন বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে!
No comments found



















