বিশ্ব বদলের হাতিয়ার ব্যবসা, তরুণদের গন্তব্য নতুন সভ্যতা—ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী কাঠামো—এমনটাই বিশ্বাস করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন,
“পৃথিবী বদলাতে চাইলে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসা। বাংলাদেশে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র। এই সম্ভাবনার সঠিক ব্যবহার হলে, কেবল বাংলাদেশের নয়—বিশ্বের ভবিষ্যৎও বদলে যেতে পারে।”
বাংলাদেশের ‘চেঞ্জমেকিং’ আইডিয়া
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের হাতে রয়েছে এমন সব অনন্য ও চমৎকার আইডিয়া, যেগুলো দিয়ে গোটা দুনিয়া বদলে দেওয়া সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন,
“একসময় ক্ষুদ্রঋণ যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের একটি গ্রাম থেকে, কিন্তু আজ তা আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র। এটি প্রমাণ করে—ভালো আইডিয়া কখনও সীমাবদ্ধ থাকে না।”
সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের রূপরেখা
তার মতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য ‘সামাজিক ব্যবসা’ হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। তিনি বলেন,
“বাংলাদেশই হচ্ছে সামাজিক ব্যবসার আদর্শ স্থান। আমরা যদি প্রথাগত ব্যবসার বাইরে এসে মানবিকতার ভিত্তিতে ব্যবসা করি, তাহলে সমাজ ও পৃথিবী—উভয়ই বদলে যাবে।”
পরিবেশ ও সভ্যতার প্রতি দায়বদ্ধতা
তিনি জোর দেন পরিবেশবান্ধব ব্যবসার ওপর, যেখানে কার্বন নিঃসরণ থাকবে না। ইউনূস বলেন,
“বর্তমান সভ্যতা আত্মবিধ্বংসী পথে হাঁটছে। আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা একটি ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যৎ চাই, না কি টেকসই উন্নয়ন চাই।”
১৯৭১-র স্মৃতিতে আবেগে ভাসলেন
বক্তব্যের একপর্যায়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধান উপদেষ্টা। কিছু সময় তিনি থেমে যান, যেন ফিরে যান সেই দুর্বিষহ দিনগুলোর স্মৃতিতে।
তরুণদের প্রতি বার্তা: “সরকারের অপেক্ষায় নয়, নেতৃত্ব নাও এখনই”
তরুণদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিয়ে তিনি বলেন,
“আপনারাই এই পৃথিবী বদলাবেন। সরকার কী করছে বা করবে তা দেখে বসে থাকার সময় নেই। এখন থেকেই এগিয়ে আসুন—নতুন সভ্যতা গড়ার জন্য।”
তরুণদের মধ্যেই তিনি দেখেন নতুন দুনিয়ার নির্মাতা। ব্যবসা হবে তাদের হাতিয়ার—যা লাভের বাইরে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
সম্মেলনে অ্যাওয়ার্ড প্রদান
সকাল ১০টায় ড. ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন। বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করেন তিনি।
🔹 ইনোভেশন ক্যাটাগরি: ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড
🔹 ইএসজি ক্যাটাগরি: ওয়ালটন
🔹 বিদেশি বিনিয়োগ ক্যাটাগরি: বিকাশ
🔹 স্থানীয় ক্যাটাগরি: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস
বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইয়ানওয়ান করপোরশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং-কে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
শেষ কথা
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য শুধু একটি সম্মেলনের অংশ নয়, বরং এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি—যা তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে নতুন ধরনের উন্নয়নমূলক ব্যবসা শুরু করতে।
তিনি দেখিয়েছেন, ব্যবসা শুধু অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, বরং সমাজ বদলে দেওয়ার এক মহাশক্তি।