ভারী বর্ষণ আর চেনাব নদীর প্রবল স্রোতে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তীররক্ষা বাঁধ ধ্বংস করেছে। এতে ঐতিহাসিক কর্তারপুর সাহিব পবিত্র স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে।
পাকিস্তানে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হঠাৎ করেই চেনাব নদীর পানির প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। সেই চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিরাবাদ বাঁধ। বড় ধরনের ভাঙন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডান পাশের তীররক্ষা বাঁধ উড়িয়ে দেয়। এর ফলে পানির চাপ কিছুটা কমলেও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিখ তীর্থস্থান কর্তারপুর সাহিবে, যেটি পুরোপুরি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র মাজহার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “বাঁধের মূল অবকাঠামো রক্ষার জন্য আমাদের বিকল্প কোনো উপায় ছিল না। তাই ডানপাশের তীররক্ষা বাঁধ ধ্বংস করতে হয়েছে। এতে পানির চাপ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।”
ভারতের দিক থেকেও পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত চেনাব নদীর জলকপাট খোলার আগে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলামাবাদকে অবহিত করেছিল। তবে এ বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর মধ্যে চেনাব, রাভি ও সুতলেজ নদীতে এখন পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ ভারতীয় পাঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে প্রবল বর্ষণ। পানির এই হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশে বন্যার উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জরুরি সতর্কতায় নদী তীরবর্তী লাখো মানুষকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চেনাব, রাভি ও সুতলেজ নদীর আশপাশের গ্রাম ও শহরে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যেই গৃহহীন হয়েছে, অনেক ক্ষেত-খামার পানির নিচে ডুবে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ যদিও বাঁধকে রক্ষা করতে সহায়ক হয়, তবে এর সামাজিক ও মানবিক মূল্য ভয়াবহ। বিশেষ করে কর্তারপুর সাহিবের মতো ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পানির নিচে ডুবে যাওয়া লাখো শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য বড় আঘাত।
অন্যদিকে, পরিবেশবিদদের মতে, আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই এই ধরনের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। তারা মনে করেন, বর্ষার মৌসুমে পানি ছাড়ার আগে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি।
পাঞ্জাব জুড়ে চলমান এই বন্যা কেবল অবকাঠামো নয়, স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে পানির প্রবাহ কমার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এটি সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে।