close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
বীর মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেবের বুকভরা ক্ষত: যুদ্ধের স্মৃতি, পোড়া ঘরের যন্ত্রণা, আর এক প্রতারণার চক্র


স্বাধীনতা অর্জনের পর এক নতুন যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে এসেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেব সরস্বতী। দেশ স্বাধীন হলেও তার জীবনে অবর্ণনীয় কষ্টের শেষ ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের আগরতলা জিবি হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেওয়ার সময় শর্মিলা দেবের মনে গেঁথে গেছে এক অদ্ভুত দেশপ্রেমের অভিজ্ঞতা। তিনি তখন দেখেছেন, আহত মুক্তিযোদ্ধারা ‘স্ট্যানগান কই’ বলে চিৎকার দিচ্ছিলেন, আর যুদ্ধের প্রতি তাদের অমিত অনুপ্রাণনা তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর, যখন তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে যান, তখন তাকে অপেক্ষা করছিল একটি পোড়া ঘর। রাজাকাররা তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এই কষ্টের স্মৃতি আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি বলেন, “বুড়া হইলে কেউ কি আর খবর রাখে। কত যে সমস্যায় আছি, তাও কোনো রকমে দিন পার হয়ে যাচ্ছে।” তিনি এখনো প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন এবং সরকারের দেয়া ‘বীর নিবাস’-এ বাস করছেন। তবে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার জীবন এখন অনেকটাই সীমাবদ্ধ।
তবে গত কিছুদিন আগে, শর্মিলা দেব এক প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে এক প্রতারক তার কাছ থেকে কিছু টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তাকে ভয় দেখিয়ে নানা প্রশ্ন করে। এই ঘটনাটি তাকে এক নতুন মানসিক যন্ত্রণা এনে দিয়েছে, যার ফলে তার জীবনের এক নতুন ক্ষত তৈরি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে শর্মিলা দেব তার অতীতের এক রক্তাক্ত স্মৃতি স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
শর্মিলা দেব জানান, ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে শুরু করলেও তিন মাস পর তা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু ২০১০ সাল থেকে আবার নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বীর নিবাস’ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া বড় একটি স্বীকৃতি, যা তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দেয়।
তবে একদিকে শারীরিক অসুস্থতা, অন্যদিকে জীবনের স্মৃতি তাকে নিয়ে যায় সেই দুঃসহ অতীতে, যখন রাজাকাররা তার ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, তার জীবনে পোড়া ঘরের ক্ষত এখনও মনে ভাসে।
Hiçbir yorum bulunamadı