উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটিতে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন ১৯ জন। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাইলট তৌকির ইসলাম বিমানটি জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেন।
ঢাকার দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১৬৪ জন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
সোমবার (২১ জুলাই) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ বিজিআই মডেলের এই যুদ্ধবিমানটি রাজধানীর কুর্মিটোলায় অবস্থিত বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে প্রশিক্ষণ মিশনে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছু সময় পরই বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলেও পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম শেষ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান।
পাইলট জনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে বিমানটিকে একটি জনশূন্য স্থানে নামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিমানটি দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় ভবনটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ অবস্থান করছিলেন, ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।
বিধ্বস্তের ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যান কয়েকজন, আর বাকিদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের সমন্বিত দল।
বিমান বাহিনী সূত্র জানায়, পাইলট তৌকির ইসলাম নিজের জীবন বাজি রেখে সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয় ঠেকাতে সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি শেষ পর্যন্ত জনবহুল এলাকা থেকে বিমানটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই বিপজ্জনক মিশনে তার জীবন উৎসর্গের ঘটনা অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
আইএসপিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
বিমান বাহিনীর প্রধান বর্তমানে সরকারি সফরে বিদেশে থাকায় দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন)। তিনি সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করেন।
এছাড়াও সেনাবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
আইএসপিআরের বার্তায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এই দুর্ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত এবং হতাহতদের সার্বিক চিকিৎসা ও সহায়তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিমান বাহিনী সব ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।