সুপ্রিম কোর্টের বিজয়-৭১ ভবনে অবস্থিত ১৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চ এবার স্থানান্তরিত হয়েছে এনেক্স ভবন ও মূল ভবনের বিভিন্ন কক্ষে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বিচারিক কার্যক্রমকে আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজয়-৭১ ভবনে হাইকোর্ট বিভাগের রিট, এ্যাডমিরালটি, কোম্পানি ও ফৌজদারী মোশন এখতিয়ারসম্পন্ন বেঞ্চ সমূহ অবস্থিত ছিল। কিন্তু সেখানে আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীরা নানা সমস্যায় পড়ছিলেন। বিশেষত প্রবীণ ও মহিলা আইনজীবীরা লিফটের অপ্রতুলতা ও ভবনের দূরত্বের কারণে যথাসময়ে আদালতে হাজির হতে পারছিলেন না, যা বিচারিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রধান বিচারপতির কাছে একটি দরখাস্ত জমা দেয়, যাতে তারা এই বেঞ্চগুলো বিজয়-৭১ ভবন থেকে এনেক্স ও মূল ভবনে স্থানান্তরের আবেদন জানায়। এই দরখাস্তে বলা হয় যে, বিজয়-৭১ ভবনটি আইনজীবী সমিতি ভবন থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে এবং ভবনের লিফট ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। তাই আইনজীবীরা সময়মতো আদালতে উপস্থিত হতে পারছেন না, যার কারণে বিচার কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
এরপর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিষয়টি “Judges' Committee for Supreme Court Estate Management, Preservation and Development” এর কাছে পাঠান মতামত সংগ্রহের জন্য। ঐ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি ২২ জুন থেকে বেঞ্চ স্থানান্তরের নির্দেশনা দেন।
স্থানান্তর কর্মসূচির আওতায়, বিচারপতি মো: রেজাউল হাসানের রিট বেঞ্চ বিজয়-৭১ ভবনের ৯ নম্বর এজলাস থেকে মূল ভবনের ১০ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি মো: হাবিবুল গনির রিট বেঞ্চ ৩ নম্বর এজলাস থেকে মূল ভবনের ৭ নম্বর এজলাসে গিয়েছে।
বিচারপতি জে বি এম হাসানের ফৌজদারী বেঞ্চ ৭ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ১৩ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন চৌধুরীর রিট বেঞ্চ ১ নম্বর এজলাস থেকে মূল ভবনের ২৬ নম্বর এজলাসে গেছে।
বিচারপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেনের রিট বেঞ্চ ১২ নম্বর এজলাস থেকে মূল ভবনের ১৪ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর কোম্পানি ম্যাটারের বেঞ্চ ১৪ নম্বর এজলাস থেকে মূল ভবনের ২৫ নম্বর এজলাসে গিয়েছে।
বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের ফৌজদারী বেঞ্চ ১১ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ৩ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের ফৌজদারী বেঞ্চ ৮ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ৮ নম্বর এজলাসে গিয়েছে।
মো: কামরুল হোসেন মোল্লার ফৌজদারী বেঞ্চ ১৫ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ১৬ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি মো: আতোয়ার রহমানের ফৌজদারী বেঞ্চ ২৭ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ২৫ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের রিট বেঞ্চ ১০ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ২৬ নম্বর এজলাসে গিয়েছে।
বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের ফৌজদারী বেঞ্চ ২৫ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ১ নম্বর এজলাসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের রিট বেঞ্চ ২০ নম্বর এজলাস থেকে এনেক্স ভবনের ১২ নম্বর এজলাসে গেছে।
এছাড়াও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর কোম্পানি ম্যাটারের বেঞ্চ এনেক্স ভবনের ৩৪ নম্বর এজলাসে বসবে।
এই স্থানান্তরের ফলে আদালত ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি সুবিধা আসবে। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা এখন থেকে সুনির্দিষ্ট ও সহজলভ্য অবস্থানে তাদের মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। লিফট সুবিধা এবং ভবনের সুষ্ঠু অবকাঠামো থাকার কারণে প্রবীণ ও মহিলা আইনজীবীসহ সবাই সময়মতো আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন।
সেই সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং মামলার নিষ্পত্তি আরও দ্রুত হবে। দীর্ঘসময় ধরে বিচার প্রার্থীদের হয়রানি কমবে। ফলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপকে বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে দেখছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, সুবিচার নিশ্চিত করতে দ্রুততম ও আধুনিক পরিবেশ তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি। এজন্য ভবন ব্যবস্থাপনা ও স্থাপত্যগত পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
আদালতের ভিতরে কার্যক্রমের জন্য সঠিক স্থান ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই ভবিষ্যতে বিচার ব্যবস্থার সফলতা নির্ধারণ করবে। তাই বিজয়-৭১ থেকে বেঞ্চ স্থানান্তর শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটি বিচারব্যবস্থার আরও দক্ষ ও মানবিক করার একটি বড় উদ্যোগ।
সুপ্রিম কোর্টের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজয়-৭১ ভবন থেকে মূল ও এনেক্স ভবনে স্থানান্তরিত হয়ে নতুন কর্মপরিবেশের সূচনা করেছে। এই সিদ্ধান্ত আইনি কার্যক্রমকে দ্রুততর ও সহজলভ্য করবে, বিশেষ করে প্রবীণ ও মহিলা আইনজীবীদের জন্য। ২২ জুন থেকে কার্যকর হওয়া এই পরিবর্তন বিচারপ্রার্থীদের জন্য হবে বর্ষিত উপকার। এটি সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে গণ্য হচ্ছে।