close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিয়ের আগেই জানুন স্বাস্থ্যঝুঁকি: এই ৭টি মেডিকেল টেস্ট না করলে জীবনভর হতে পারে অনুশোচনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শুধু প্রেম-ভালোবাসা নয়, বিয়ের আগে দরকার বাস্তব প্রস্তুতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ৭টি গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল টেস্ট না করিয়ে বিয়ে মানে ভবিষ্যৎ বিপদের দাওয়াত! বিস্তারিত জানুন.....

বিয়ের আগেই স্বাস্থ্য যাচাই কেন জরুরি? আপনার অজান্তেই লুকিয়ে বিপদের ছায়া!

বিয়ে মানে শুধু ভালোবাসা আর সামাজিক বন্ধন নয়—এটি একটি গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্বের শুরু। যখন দুটি মানুষ নতুন জীবনের সূচনা করেন, তখন শুধু নিজেদের নয় বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, পরিবার ও সমাজের প্রতিও তাদের একটি দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। অথচ আমরা অনেক সময়ই এই অধ্যায়ের সূচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকেই এড়িয়ে যাই—স্বাস্থ্য।

বর্তমানে চিকিৎসকরা বিয়ের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন, যাকে বলা হয় Premarital Medical Check-Up। এই পরীক্ষাগুলো কেবল দাম্পত্য জীবনের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাই নিশ্চিত করে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতার পথও প্রশস্ত করে।

কেন দরকার প্রি-ম্যারিটাল টেস্ট?

এই স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করালে আগেভাগেই জানা যায়—

  • কোনো সংক্রামক বা যৌনবাহিত রোগ আছে কিনা

  • কোনো জিনগত বা বংশগত রোগের ঝুঁকি রয়েছে কিনা

  • সন্তান ধারণে কোনো সমস্যা আছে কিনা

  • দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা মানসিক সমস্যা রয়েছে কিনা

এর ফলে দাম্পত্য জীবনে স্বচ্ছতা, আস্থা ও সচেতনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্পর্ক হয় মজবুত, দায়িত্বশীল ও টেকসই।


বিয়ের আগে করিয়ে নিন এই ৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা

১. হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস

এটি এমন একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে বোঝা যায়, আপনি বা আপনার সঙ্গী থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। বর ও কনে উভয়েই যদি বাহক হন, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মারাত্মক রক্তের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এটি একটি জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

২. রক্তের গ্রুপিং ও Rh টাইপিং

আপনার রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর জানলে ভবিষ্যৎ গর্ভধারণে বড় জটিলতা এড়ানো সম্ভব। বিশেষত, স্ত্রী যদি Rh-নেগেটিভ হন আর স্বামী Rh-পজিটিভ—তবে সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

৩. যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা (HIV, হেপাটাইটিস B ও C, সিফিলিস)

এই রোগগুলো যৌন সম্পর্ক ও রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। আগেই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেলে চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজেকে ও সঙ্গীকে সুরক্ষা দেওয়া যায়, পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমানো যায়।

৪. বন্ধ্যত্ব বা সন্তান ধারণ-সক্ষমতা পরীক্ষা

শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও উর্বরতা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর গুণগত মান ও গতিশীলতা, নারীর ক্ষেত্রে হরমোন ও ডিম্বাণুর অবস্থা যাচাই করা হয়।

৫. জিনগত বা বংশগত রোগের স্ক্রিনিং

বিশেষ করে আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ের ক্ষেত্রে জিনগত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। অটিজম, হেমোফিলিয়া, মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি রোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আগে থেকে সতর্ক থাকাই একমাত্র উপায়।

৬. দীর্ঘমেয়াদি রোগ (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড) পরীক্ষা

এই রোগগুলো সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকলে জীবনযাপন ও চিকিৎসা গ্রহণে সহায়ক হয়। অজান্তেই এই রোগগুলো দাম্পত্য জীবনে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।

৭. মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন

বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া বা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের মতো মানসিক সমস্যাগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত না করলে, তা একসময় সম্পর্ক ধ্বংস করে দিতে পারে। মানসিকভাবে সুস্থ দুজন মানুষই একটি স্বাস্থ্যকর ও সুখী সংসার গড়তে পারেন।


প্রি-ম্যারিটাল চেকআপের ধাপসমূহ

১. ডাক্তারের পরামর্শ: পরিবারের স্বাস্থ্য ইতিহাস ও ব্যক্তিগত সমস্যা আলোচনা
২. শারীরিক পরীক্ষা: উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ ইত্যাদি পরিমাপ
৩. ল্যাব টেস্ট: উপরোক্ত সাতটি পরীক্ষা
৪. জিনগত রোগ স্ক্রিনিং: থ্যালাসেমিয়া বা অন্যান্য বাহক অবস্থার শনাক্তকরণ
৫. রিপোর্ট বিশ্লেষণ ও পরামর্শ: ফলাফলের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ


ভালোবাসার আগে স্বাস্থ্যজ্ঞান

অনেকেই ভাবেন, বিয়ের আগে এমন পরীক্ষা করানো মানে সঙ্গীর প্রতি সন্দেহ প্রকাশ। কিন্তু আসলে এটি একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতার নিদর্শন। ভালোবাসা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তাতে থাকে স্বচ্ছতা, সততা ও স্বাস্থ্যসচেতনতা।

তাই নিজের ও ভালোবাসার মানুষের ভবিষ্যৎ রক্ষায় আজই করে ফেলুন এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কারণ, সুস্থ দাম্পত্য জীবনের শুরু হয় একটুকু সচেতনতায়।

Geen reacties gevonden