জামালপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শহর। মশাল মিছিলে অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
জামালপুর জেলায় বিএনপির রাজনীতিকে ঘিরে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জেলা বিএনপির সম্মেলন বন্ধের দাবিতে একাংশের ডাকা হরতালের সমর্থনে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাতে শহরে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মশাল হাতে ওই মিছিলে অংশ নেন বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে এ সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ৮টার দিকে জামালপুর শহরের বকুলতলা চত্বর থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের একাংশের উদ্যোগে একটি মশাল মিছিল বের হয়। শামীম আহাম্মেদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দয়াময়ী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পরবর্তীতে ফেরার পথে আরও কয়েক জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে তাদের অভিমত।
নেতাকর্মীদের দাবি, আগামী ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য জেলা বিএনপির সম্মেলন বন্ধ করতে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সম্মেলনের মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলীয় নেতৃত্বে আনার চেষ্টা চলছে। এজন্য তারা তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি বা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের দাবি জানান। এ দাবিকে কেন্দ্র করেই বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জামালপুরে সর্বাত্মক হরতাল আহ্বান করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান সজীব বলেন, "কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি জামালপুর জেলা বিএনপির সম্মেলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হরতাল ডেকেছে এবং মশাল মিছিল করেছে। আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি। জেলা বিএনপির আসন্ন সম্মেলন নিয়েই আমরা ব্যস্ত আছি। সাধারণ মানুষ এসব কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ্বাস।"
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে। জামালপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, "এখনো এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ ইতোমধ্যে অডিও ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
উল্লেখ্য, বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব নতুনভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। একাংশ সম্মেলন বন্ধে হরতাল ও মশাল মিছিলের মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, অন্যদিকে মূলধারার নেতারা এসবকে "বিতর্কিত পদক্ষেপ" বলে দাবি করছেন।
শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রাতের মিছিল এবং বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। আবার যারা বাইরে ছিলেন, তারা দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে গেলে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে।
এ ঘটনার পর জামালপুরের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আগামী ২৩ আগস্টের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে কিনা, কিংবা এ সম্মেলনকে ঘিরে আরও কী ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়, সেটিই এখন সবার নজরে।