close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিএনপির রাষ্ট্রসংস্কার বিরোধিতা দুর্নীতি, ক্ষমতা ও অপরাধ টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম..

Bokhtiar Shamim avatar   
Bokhtiar Shamim
বিএনপি বারবার রাষ্ট্রসংস্কারের বিরোধিতা করে চলেছে—কিন্তু কেন? সংস্কার মানে দুর্নীতির অবসান, স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান ও জবাবদিহিতা, যা বিএনপির রাজনৈতিক অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেলে। তাদের শাসনামলে দুর্নীতি, সন্ত্র..

বিএনপির রাষ্ট্রসংস্কার বিরোধিতা দুর্নীতি, ক্ষমতা ও অপরাধ টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম

 

রাষ্ট্রসংস্কার কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচারের পথে অগ্রসর হওয়ার অপরিহার্য শর্ত। এই সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় এবং শাসনের মূল লক্ষ্য জনগণের সেবা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রসংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বহুদিন ধরে উচ্চারিত হয়ে আসছে। অথচ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বারবার প্রকৃত সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে তাদের বিরোধিতা প্রশ্ন তোলে: বিএনপি কেন রাষ্ট্রসংস্কারের বিরুদ্ধে এতটা কঠোর?

 

১৯৭৮ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি শুরুতে জাতীয়তাবাদ ও তথাকথিত গণতন্ত্রের স্লোগান তুলে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে দলটি যখন ক্ষমতায় আসে, বিশেষ করে ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সময়কালে, তাদের শাসনামল দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচন কারচুপি এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্বল করে ফেলার ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে ওঠে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এবং ফ্রিডম হাউসের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বারবার এই সময়গুলোতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরেছে।

 

রাষ্ট্রসংস্কারের প্রকৃত রূপ বোঝা গেলে বিএনপির আতঙ্ক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রকৃত সংস্কারের মানে হলো স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, অরাজনৈতিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মুক্ত গণমাধ্যম এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। এ ধরনের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্র সহজেই রাজনৈতিক দলগুলোর হাতিয়ারে পরিণত হয় এবং দুর্নীতির চক্র অব্যাহত থাকে। বিএনপির জন্য, এই সংস্কার তাদের সেই অপরাধমূলক রাজনৈতিক সুবিধা হারানোর শামিল।

 

বিএনপির সংস্কারবিরোধিতার পেছনে কয়েকটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, অতীতের অপরাধ আড়াল রাখার প্রবণতা। তাদের অনেক শীর্ষ নেতা আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অপরাধমূলক মামলার আসামি। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা সক্রিয় হলে এসব অপরাধের বিচার অনিবার্য হয়ে উঠবে। দ্বিতীয়ত, পৃষ্ঠপোষকতা নির্ভর রাজনীতি। বিএনপির রাজনৈতিক কাঠামো দুর্নীতিগ্রস্ত পৃষ্ঠপোষকতার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেটি প্রকৃত সংস্কারের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক দুর্নীতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিএনপি শাসনামলে ব্যাপক অর্থ পাচার ও আত্মসাতের নজির রয়েছে। কানাডার 'বেগমপাড়া' কেলেঙ্কারিতে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। শক্তিশালী আর্থিক তদারকি চালু হলে এসব অবৈধ সম্পদের উৎস ধরা পড়ে যাবে। 

 

এছাড়াও বিএনপির রাজনীতিতে সহিংসতা ছিল একটি নিয়মিত রূপ। গুম, খুন, ভূমি দখল এবং সন্ত্রাস তাদের শাসনামলে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যায়। নিরপেক্ষ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা কার্যকর হলে এইসব অপরাধের জবাবদিহি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

 

বাস্তব উদাহরণও এ কথার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। ২০০১-২০০৬ শাসনামলে পদ্মা সেতু প্রকল্প দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়। 'হাওয়া ভবন' ছিল একটি ছায়া শক্তিকেন্দ্র, যেখানে অঘোষিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হতো। আবার বিএনপির আমলের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, ভোটার দমন এবং সন্ত্রাসের বিস্তর অভিযোগ ছিল।

 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনগুলোতে বারবার বলা হয়েছে, বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশে সুশাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। যখন সারা বিশ্বে রাষ্ট্র সংস্কার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চলছে, তখন বিএনপির সংস্কারবিরোধী মনোভাব তাদের পশ্চাদপসরণকারী, স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ ঘটায়।

 

বিএনপির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগগুলো যথেষ্ট গুরুতর: তারা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দমন করেছে এবং রাষ্ট্রের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। রাষ্ট্রসংস্কার ছাড়া এই ধারা ভাঙা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে সংস্কার আজ অবশ্যম্ভাবী।

 

বিএনপির সংস্কারবিরোধিতা আসলে প্রমাণ করে যে, কিছু রাজনৈতিক শক্তির জন্য রাজনীতি জনগণের সেবা নয়, বরং নিজেদের দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মাধ্যম। সংস্কার মানে তাদের অপরাধ, লুটপাট এবং অপশাসনের চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়বে; যার অর্থ তাদের রাজনৈতিক টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

 

এটি পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার: রাষ্ট্রসংস্কার কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়। এটি একটি রাষ্ট্রের স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। বিএনপির এই সংস্কারবিরোধিতা তাদের দুর্নীতিপূর্ণ রাজনৈতিক কাঠামো রক্ষার মরিয়া চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ, যেখানে ন্যায়বিচার, সমতা ও সত্যিকারের গণতন্ত্র বিরাজ করবে, সেখানে এমন অপকাঠামোর কোনো স্থান থাকবে না। 

 

সবশেষে বলা যায়, বিএনপি রাষ্ট্রসংস্কারের বিরোধিতা করছে কারণ সংস্কার বাস্তবায়িত হলে তাদের দুর্নীতি প্রকাশ পাবে, তাদের অবৈধ নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং রাজনৈতিক ময়দানে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এখানে লড়াই কেবল রাজনীতির নয়, বরং নৈতিকতার — জনগণের সেবায় ক্ষমতা থাকবে নাকি দুর্নীতির সেবায় ক্ষমতা অপব্যবহার হবে, সেটাই নির্ধারিত হবে।

Không có bình luận nào được tìm thấy