রাজনীতিতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে—এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার বুকে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা সরাসরি অভিযোগ করেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে।”
দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এস এম শাহরিয়ার বলেন, “এই ইসি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চায় না। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষাই যেন এদের একমাত্র উদ্দেশ্য।” তিনি আরও বলেন, “বাকি আছে মাত্র ২১ কার্যদিবস, যদি এর মধ্যেই সরকার ঘোষিত ঘোষণা জারি না হয়, তাহলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনে নামব।”
অন্য এক যুগ্ম সমন্বয়ক মুহাম্মদ মুরসালিন মন্তব্য করেন, “এই কমিশন যে পক্ষপাতদুষ্ট, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পুনর্গঠন চাই, জবাবদিহিতার জন্য চাই একটি স্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।”
'ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে বিএনপি'—বলে মন্তব্য এনসিপির নেতাদের
দলের যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, “বিএনপি আবারও ওয়ান-ইলেভেন আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেই সময় যেমন বিচার বিভাগ ও ইসি দেশের গণতন্ত্রকে পঙ্গু করেছিল, এবারও তারা একই পথ নিচ্ছে।”
জমজমাট এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন, যিনি বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিবাদী সময়ের বিতর্কিত আইনে গঠিত। এই ইসি দিয়ে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।”
যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে অংশ নেন দলের অন্যান্য নেতারাও—কদমতলী থানার প্রতিনিধি মো. সাদিকুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার প্রতিনিধি লাকি আক্তার, মিরাসাদ হোসেন, ওয়ারী থানার রিফাত খান, মো. রিয়াদ প্রমুখ।
ইশরাককে নিয়ে উত্তাপ, নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নিয়ে এনসিপির আল্টিমেটাম
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় এবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে এনসিপি। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকারের কাঠামো ঢেলে সাজানো হোক।
তাদের মতে, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” বলে কিছু আর বাস্তবে নেই। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে একদলীয় স্বার্থে।
ফেসবুকে ‘ঐক্যের ডাক’—পরিকল্পিত আন্দোলনের বার্তা
বিক্ষোভের পাশাপাশি, এনসিপির নেতৃত্বাধীন সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে ‘ঐক্যের আহ্বান’। গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে একান্তে বৈঠক করেন। একই সময়ে দলের বিভিন্ন শীর্ষ নেতা ফেসবুকে ঐক্যের ডাক দিতে থাকেন।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “বিভাজনমূলক যেকোনো মন্তব্যের জন্য দুঃখিত। এখন ঐক্যই দেশের ভবিষ্যৎ।”
এই পোস্ট কপি ও শেয়ার করেছেন এনসিপির বহু নেতা, এমনকি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যরাও। দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এটি কারো ব্যক্তিগত নয়, দেশের স্বার্থেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
এনসিপির শীর্ষ নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’ পোস্ট করে লিখেছেন, “এখনই সময় জেগে ওঠার।”
উপসংহার:
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই বিক্ষোভ ও বক্তব্য শুধু নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবিই নয়, বরং একটি সম্ভাব্য রাজনৈতিক রূপান্তরের ইঙ্গিত বহন করছে। যদি সরকার ও নির্বাচন কমিশন এই আহ্বান উপেক্ষা করে, তাহলে সামনে একটি বড় গণআন্দোলনের পথ তৈরি হতে পারে।
এখন প্রশ্ন—নতুন কমিশনের দিকে এগোবে কি সরকার? নাকি আন্দোলনের আগুন আরও জ্বলবে রাজপথে?
জবাব সময়ই দেবে, তবে এনসিপির কণ্ঠে এখন বিদ্রোহের সুর স্পষ্ট।



















