close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিএনপিকে চাপে রাখতে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী দলগুলো

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে নয়, বিএনপিকেই চাপের মুখে ফেলতে চাইছে ইসলামি দলগুলো। বড় ঐক্য গড়ার মাধ্যমে তারা চায় রাজনৈতিক দর-কষাকষিতে প্রভাব বিস্তার করতে। এই ঐক্য শুধু নির্বাচনের নয়, ভবিষ্যৎ রাজনীতিরও..

ইসলামপন্থীদের ঐক্য প্রক্রিয়া জোরালো, লক্ষ্য বিএনপিকে চাপে রাখা ও দর-কষাকষির অবস্থান শক্ত করা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো সময়সূচি ঘোষণা করেনি সরকার। তবে রাজনৈতিক মাঠে বসে নেই ইসলামপন্থী দলগুলো। বরং, তারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে একটি শক্তিশালী নির্বাচনী ঐক্য গঠনের দিকে—যার মূল লক্ষ্য শুধু নির্বাচন নয়, বরং প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপিকেও রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঐক্য শুধু ভোটের বাক্স নয়, বরং রাজনীতির হিসাব-নিকাশেও বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস—এই পাঁচটি দল ইতোমধ্যে এক ছাতার নিচে আসার বিষয়ে একমত হয়েছে। লক্ষ্য একটাই: এক বাক্সে ভোট যাওয়া।

এই ঐক্যের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে চায় দলগুলো। তবে সাম্প্রতিক কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলনের কিছু নেতাকে এই ঐক্যের বাইরে রাখার কথাও উঠে এসেছে। বিশেষ করে, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ দুই নেতার প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না বাকি গোষ্ঠীগুলো।

তবে এত কিছুর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে হেফাজতে ইসলাম ঘনিষ্ঠ কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক দলগুলোর একতাবদ্ধ হবার চেষ্টা। ৫ আগস্টের পর থেকেই এই গোষ্ঠীগুলো বলছে, আগাম নির্বাচনে “ইসলামী ভোট” একত্র করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গত ১৭ এপ্রিল পাঁচটি ইসলামী দলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। এতে স্পষ্ট করা হয়, “বিরোধ ভুলে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য গড়াই এখন সবচেয়ে জরুরি।” এই বৈঠকে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও যুক্ত হয়।

রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়ায় ২১ জানুয়ারি। এদিন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির শফিকুর রহমান ও চরমোনাই পীর রেজাউল করিমের মধ্যে এক যুগান্তকারী সাক্ষাৎ ঘটে। এই সাক্ষাৎ ইসলামী রাজনীতির দুই বিপরীত মেরুর মধ্যে নতুন সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিছু নেতা এই ঐক্যকে “স্বাধীনতা বিরোধীদের জোট” এবং “ফ্যাসিবাদের সহযোগী” বলে আখ্যায়িত করেন। অথচ এর মাত্র পাঁচদিন পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চরমোনাই পীরের সঙ্গে বৈঠক পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তারা ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে একটি যৌথ ঘোষণাপত্রেও সই করে।

তবে এখানেই শেষ নয়। ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের সম্মেলনে জামায়াতের আমির কড়া বার্তা দেন: “ইসলামী দলগুলোর মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।” অর্থাৎ, তারা আর কারও পেছনে লাইন ধরবে না—নিজস্ব অবস্থানেই শক্তভাবে দাঁড়াবে।

এই মুহূর্তে ১২ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামপন্থী নেতারাও জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ করছেন। এতে একদিকে বিএনপির ভোট ব্যাংকের উপর চাপ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সমীকরণেও বড় পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বিএনপির কৌশলে বাধা সৃষ্টি করবে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা একটি “কিং-মেকার” ভূমিকা নিতে পারে—বিশেষ করে যদি নির্বাচনে কোনো জোট সরকার গঠনের প্রয়োজন হয়।

এই দৃশ্যপটে স্পষ্ট—ইসলামী রাজনীতির আগামী কৌশল শুধুই ধর্মনির্ভর ভোট নয়, বরং রাজনৈতিক বার্গেনিং বা দর-কষাকষির ক্ষেত্রেও তাদের উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

Nenhum comentário encontrado