বিএনপি নেতাদের দাবি, তাদের ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবই দেশের জন্য যথেষ্ট। নতুন সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খাইরুল কবির খোকন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন অভিযোগ করেছেন যে, দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন করে সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। তার দাবি, বিএনপি ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যে ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, সেটিই দেশের জন্য যথেষ্ট। এর বাইরে নতুন সংস্কারের কথা বলা আসলে মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক ফাঁদ পাতা।
গতকাল বিকেলে মাদারীপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও সংসদীয় আসনভিত্তিক প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খাইরুল কবির খোকন। এ সময় তিনি বলেন, “হল রাজনীতি চালু থাকলে ডাকসুসহ দেশের সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তাই ষড়যন্ত্র করে হল রাজনীতি বন্ধ রাখার চেষ্টা চলছে। একইভাবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হলে সেটিকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে— পিআর পদ্ধতি, স্থানীয় নির্বাচন এবং সংস্কারের নামে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের সব বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। এর চেয়ে বড় কোনো সংস্কারের প্রস্তাব এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন সুসংগঠিত সংস্কার পরিকল্পনা আর কোনো দল বা সরকার উপস্থাপন করতে পারেনি। একমাত্র বিএনপির পক্ষেই, বিশেষ করে তারেক রহমানের নেতৃত্বে, এমন উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।”
ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গ টেনে খোকন বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হারালে আবারো ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ২০০৭ সালে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা হয়েছিল। আর তারেক রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভবনের তৃতীয় তলা থেকে ফেলে দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছিল।”
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিপিকে সরকারের ‘কিংস পার্টি’ আখ্যা দিয়ে খোকন বলেন, “তারা সরকারে না থেকেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। ডিসি, এসপি, ওসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি অফিসে তাদের অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি ফাইভ স্টার হোটেল পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে। অথচ তারা দাবি করে, সংস্কার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচন হতে দেবে না। আমরা ১৬ বছর ধরে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করেছি। অনির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ কখনোই নিরাপদ নয়।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। সঞ্চালনায় ছিলেন নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কমিটির প্রধান সিরাজুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মাশুকুর রহমান মাসুক, সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সদস্য কাজী হুমায়ুন কবির, মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জামিনুল হোসেন মিঠু, মিজানুর রহমান মুরাদ প্রমুখ।
খোকনের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বিএনপি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক কৌশলের লড়াই হিসেবে দেখছে, যেখানে ‘সংস্কার’ শব্দটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ হিসেবে। তার দাবি, জনগণের কাছে ইতোমধ্যেই বিএনপি তাদের সংস্কার নীতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তাই নতুন করে সংস্কারের কথা বলা আসলে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে প্রভাবিত করার কৌশল মাত্র।