সিলেটে অনুষ্ঠিত এক ব্যবসায়িক সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক বিস্ময়কর কর্মসংস্থান পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাই, তাহলে সরকার গঠনের পর প্রথম ১৮ মাসে অন্তত ১ কোটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। কারণ দেশের অর্থনীতিকে আবার সৃজনশীল ও প্রাণবন্ত করতে হলে কর্মসংস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে সিলেট শহরের মেন্দিবাগ এলাকার জালালাবাদ গ্যাস অডিটোরিয়ামে 'সিলেট বিজনেস ডায়লগ' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আমীর খসরু বলেন, “গত ১৭ বছরে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তারা দেশের অর্থনীতিকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যে এখানে নতুন উদ্যোক্তা গড়ে ওঠার সুযোগই আর নেই। আগে যেখানে ব্যবসায়ীরা স্বপ্ন দেখতেন, আজ সেখানে ভয় আর অনিশ্চয়তা কাজ করে। ব্যাংকিং খাত, বিনিয়োগ পরিবেশ, রপ্তানি খাত—সব কিছুতেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলছে।”
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যবসাকে রাজনীতির বাইরে রাখা। রাজনীতিকে হতে হবে জনমুখী এবং ব্যবসাবান্ধব। আর এজন্য প্রয়োজন একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
বিএনপি নেতা বলেন, “অনেকে বলবেন, ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান কীভাবে সম্ভব? আমি বলি, এটা আমাদের পরিকল্পনারই অংশ। আমাদের দেশে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রবাসী কল্যাণের যে বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোকে যদি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে ১ কোটি কর্মসংস্থান কঠিন কিছু নয়। আমরা সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে একটি বিস্তৃত কর্মসূচি হাতে নেব।”
তিনি আরও বলেন, “বিজনেস ডায়লগ আয়োজনের উদ্দেশ্যই হলো—আমরা আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) মতামত শুনতে এসেছি। আমাদের পরিকল্পনা নিচ থেকে নিতে চাই। সেন্ট্রাল প্ল্যান দিয়ে নয়, বরং স্থানীয় বাস্তবতা থেকে উঠে আসা উদ্যোগই কার্যকর হবে।”
আমীর খসরু এসময় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “আগের মতো করে আর রাজনীতি করা যাবে না। দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা জানে কোথায় অন্যায় হচ্ছে, কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা। তাই আমাদের রাজনীতিও পরিবর্তন করতে হবে। জনতার মন-মানসিকতা বদলে গেছে—রাজনীতিকদেরও বদলাতে হবে।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এই ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হবে। তাই এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সবার ঐক্য জরুরি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী আমীর খসরুর বক্তব্যকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতের রূপরেখা ও কর্মপরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছে—যা বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আশার আলো জাগায়। সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা চাই এমন একটি সরকার, যারা আমাদের কথা শোনে, আমাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়। আজকের এই উদ্যোগ আমাদের আশাবাদী করেছে।”
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমীর খসরুর এমন বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, অর্থনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন তুলতে পারে। কর্মসংস্থানের অভাব, বিনিয়োগ সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে এমন সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করতে পারে। এখন দেখার বিষয়—এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ তারা আদৌ পায় কিনা।