রাজনীতির মোড় ঘোরানো মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি ছাড়া দেশে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো আর কোনো দল নেই।” তাঁর এই মন্তব্য শুধু আলোচনার ঝড়ই তোলে না, বরং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট নিয়েও নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়।
ফুয়াদ বলেন, দেশের রাজনীতিতে আজ যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তার একমাত্র ব্যাখ্যা হলো বিএনপির নির্বাচনী ট্রমা এবং বাকিদের অকার্যকর রাজনৈতিক কাঠামো। তাঁর ভাষায়, “বিএনপি ‘ওয়ান ইলেভেন’ পরবর্তী সময়ে একটি মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে চলছে, যা দলটির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে। তবে এটিকে অবাস্তব বলা যাবে না। বরং তাদের অবস্থান বাস্তবধর্মী।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ২০০১ সালের পর বিএনপি আর কোনো নিরপেক্ষ বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক ধারা চালু হওয়ার পর থেকে অন্তত দু’বার বিএনপির ক্ষমতায় ফেরার বাস্তব সুযোগ ছিল। কিন্তু নানা বাধা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এই বক্তব্যের পাশাপাশি ফুয়াদ আরও বলেন, দেশের ভেতরে একটি ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ শুরু করার চেষ্টা চলছে, যার পেছনে তিনি দায়ী করেন তথাকথিত ‘ইউনুস সরকার’-কে। তাঁর অভিযোগ, “মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে একটা যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর পরিকল্পনা চলছে। নির্বাচন পিছিয়ে জুনের পর নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবটিও মূলত একটি ভারতীয় বয়ান। এটি নিছক সময়ের ব্যাপার নয়, বরং এটি একটি ‘ইন্ডিয়ান ডিসকোর্স’।”
তিনি আরও দাবি করেন, ভারতীয় মিডিয়া এবং তাদের নির্দিষ্ট কিছু সাংবাদিক—যেমন সুবীর ভৌমিক ও চন্দন নন্দী—নিয়ে একটি পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাঁর মতে, এই প্রচারনাটি মূলত একটি কৌশলগত ‘হ্যাজিমনিরাইটেড’ অপারেশন যা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে রূপান্তর করতে চায়।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে উদাহরণ হিসেবে টেনে ফুয়াদ বলেন, “যখন একজন মার্কিন নাগরিকের কাছে সশস্ত্র বাহিনী রিপোর্ট করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন সেটাও স্পষ্ট বার্তা দেয়—দেশীয় নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক চাপে ফেলা হচ্ছে।”
তবে পুরো আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বিএনপির মনস্তত্ত্ব ও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা। ফুয়াদ বলেন, “বিএনপির ইলেক্টোরাল ট্রমাটা বাস্তব, এবং এই ট্রমা না বোঝার ভান করে লাভ নেই। বরং এটিকে স্বীকার করে রাজনীতিতে বাস্তবতা বিবেচনায় আগানো উচিত।”
আলোচনার শেষদিকে উপস্থাপক যখন প্রশ্ন করেন, বিএনপির লাগাতার আন্দোলনের পেছনে কি এই ট্রমাই প্রধান কারণ?
ফুয়াদ অত্যন্ত নির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দেন, “ধৈর্য আশা করছি। কারণ, বিএনপি ছাড়া ক্ষমতায় আসার মতো আর কোনো দল এখন দেশে নেই।”
এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেউ এটিকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিচ্ছেন, কেউ আবার ফুয়াদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে—বিএনপিকে উপেক্ষা করে এখনো বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।