close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকট শব্দে ঘরে ফাটল, এলাকাবাসীর মানববন্ধন..

Imran Hossain avatar   
Imran Hossain
****

সহস্র দেয়ালে ফাটল। বিভিন্ন সময়ে ঘরের ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার ভেঙে পড়ার শব্দে গভীর রাতে ঘুম ভাঙে বাড়ির কর্তাদের। শুধু ছাদ আর দেয়াল নয়, যেন স্বপ্ন ভাঙার শব্দ। অনেকের নতুন বাড়ি তৈরির পাকা দেয়ালে ভাঙন দেখা দিয়েছে নির্মাণের কয়েকদিনের মধ্যে। দেখে যেন মনে হবে ভূমিকম্প বা গাজার কোনো রাজ্যে কাঁপছে তারা।

গত ১৫ বছর ধরে এভাবে দিন কাটাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর জুলধা ডাঙ্গারচর এলাকার শতাধিক পরিবার। গণবসতিতে গড়ে উঠা জুলধা-ডাঙ্গারচর কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকট শব্দ, অতিরিক্ত কাঁপুনিতে অতিষ্ঠ হয়ে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল ফটকে মানববন্ধন করেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা।

ঘাট চৌধুরীর বাড়ী ও হাজী ছমদ মিয়ার বাড়ী রক্ষা কমিটির ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার মুখপাত্র মাহবুবা ইলা খাদিজা তোহফা, ছাত্র প্রতিনিধি ইমরান হোসেন তারা, মিজানুর রহমান খোকা, রহমান মুন্না, সেলিম রেজা, ফয়সাল সিফাত,  ফয়সাল, মোহাম্মদ শাহেদ, কামাল, মুজিব, সাজিদ, আনিকা, সাইমা, মেহরুন, আরমান, স্থানীয় বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম নুর মোহাম্মদ, মুছা, লোকমান, আবুল কাসেম, যুবদল নেতা সাদ্দাম, মামুন, ছাত্রদল নেতা রায়হান, মিজান, নেজাম উদ্দিন ভুট্টো, ফজল করিম বাদশা, আবদুর রহমান, হাসান, ফখরুল ইসলাম, ডা. শফি, কালু, খোকন, আবদুর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়রা নারী-পুরুষরা।

বক্তারা জানান, তাদের বিকল শব্দে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। ঘরের ছাদ ও দেয়াল ফাটল দেখা দিয়েছে। বায়ু ও পানি দুষণের পাশাপাশি এলাকায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি ওঠে না কলে। কর্ণফুলী নদীর জোয়ার ছাড়া পানি পাওয়া যায় না এখানে। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ব্যহৃত এবং জীবনমান হুমকির মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের শতাধিক পরিবারের। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকট শব্দ, অতিরিক্ত কাঁপুনিসহ বিভিন্ন সমস্যা গুলো বিগত ১৫ বছর ধরে জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। যে কোনো মুহূর্তে বড়ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের ক্ষতিগ্রস্তদের। অতিষ্ঠ হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছে মানুষ।

স্থানীয়রা অভিযোগ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় তাদের চাষাবাদ যোগ্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় ব্যবহৃত কালো তৈল (স্লাজ) বিক্রি সুযোগের আশ্বাসে। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে সেটিও দখলে নিলে বঞ্চিত হয় ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার। এসময় বক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে ব্যবসার স্বত্ব ফিরিয়ে দেওয়াসহ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে আহবান জানান। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কামাল হোসেনের মেয়ে খাইরুন নেছা বলেন, দিনের বেলায় শব্দ একটু কম হলেও সন্ধ্যারপর থেকে সারারাত বিকল শব্দে কেউ ঘুমাতে পারে না। ঘরের ছাদ, দেয়াল এমনকি নিচের ফ্লোরও ফেটে গেছে। ভয়ে থাকি কখন ভেঙে গায়ের ওপরে পড়ে। মাঝেমধ্যে মনে হয় গাজার কোনো রাজ্যে বাস করছি। যেন দেখার কেউ নেই।

উল্লেখ্য, ফার্নেস অয়েল নির্ভর জুলধা ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি ‘একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস লিমিটেড’ এর মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ব্যবহৃত কালো তৈল প্রতি লিটার ৫ টাকা করে পাওয়ার প্লান্ট থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী কিনে বিক্রি করছে গত ১২ বছর ধরে।

No comments found