উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি একটি যুদ্ধবিমান ছিল যা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দোতলা ভবনে আছড়ে পড়ে। এই দূর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
গত সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলা বিমানবাহিনী ঘাঁটি থেকে এক যুদ্ধবিমান ওড়ার কিছু সময়ের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এটি ছিল একটি যুদ্ধবিমান, প্রশিক্ষণ বিমানের নয় — এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যদিও বিমানটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আকাশে উঠেছিল, তবে এটি যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী যুদ্ধবিমান ছিল। অনেক সংবাদমাধ্যম বিমানটিকে প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে উল্লেখ করায় আইএসপিআর স্পষ্ট করেছে যে, সেটি আসলে যুদ্ধবিমান।
বিধ্বস্ত বিমানের নাম ফাইটার টার্বোপ্রপ ৭ (এফটি-৭ বিজিআই), যা চীনে তৈরি একটি উচ্চমানের যুদ্ধবিমান। উড্ডয়ন শেষে কিছুক্ষণের মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভবনে আছড়ে পড়ে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে আগুন ধরে যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও করুণ করে তোলে।
এই দূর্ঘটনায় মোট ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানায় আইএসপিআর। আহত হয়েছেন ১৭১ জন, যাদের মধ্যে বর্তমানে ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকে শিশু ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, যারা দুর্ঘটনার সময় ওই ভবনে ছিল।
দূর্ঘটনার পর স্কুল ভবনের আশেপাশে আতঙ্কিত অভিভাবক, বন্ধুবান্ধব ও স্থানীয়রা ছুটে এসেছিলেন আহতদের খোঁজ নিতে। তারা একদিকে দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ শুনতে পান, অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে চারপাশ ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া।
প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান ব্রিফিংয়ে জানান, দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ সাহায্য প্রদানের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনা সাম্প্রতিককালে দেশের নিরাপত্তা ও বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিমান বাহিনীর আরও আধুনিক ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনোভাবেই আপস করা যাবে না।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে সরকার, সামরিক বাহিনী এবং সাধারণ জনগণ। দেশের নানা জায়গায় শোকের মাতম চলছে, যেখানে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশায় সহানুভূতি জানানো হচ্ছে।