পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টেলিফোন নির্দেশনায় বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানো শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব মিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ পৌঁছায়নি।
বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস এবং দূতাবাস প্রধানদের বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিদেশি বিভিন্ন মিশনের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হঠাৎ এমন নির্দেশনা আসায় দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে কোনো লিখিত চিঠি, ফ্যাক্স বা অফিসিয়াল ই-মেইল পাঠানো হয়নি। বরং সরাসরি টেলিফোনে অঞ্চলভিত্তিক কিছু রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর সেই রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে অন্যান্য মিশনকে খবর পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে আনুষ্ঠানিক নথি ছাড়া মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতেই গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
এদিকে, এখনো দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ, আফ্রিকার বিভিন্ন মিশন এবং ইউরোপের কিছু দূতাবাস এই নির্দেশনা হাতে পায়নি। তবে ইতোমধ্যেই বিদেশের দুটি মিশনপ্রধান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, কেবল নিজেদের মিশনে নয়, অন্যান্য মিশনেও বিষয়টি পৌঁছে দিতে এবং তদারকি করতে বলা হয়েছে তাদের।
কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, হঠাৎ করে রাষ্ট্রপতির ছবির বদলে কাকে বা কোন প্রতীকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেটি স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। সাধারণত বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে রাষ্ট্রপতির ছবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ছবিও শোভা পেত। কিন্তু নতুন এই নির্দেশনায় রাষ্ট্রপতির ছবিকে সরিয়ে ফেলার বিষয়টি আলাদা করে সামনে আসায় নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করা এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এমন সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে কার্যকর হলে তা বিদেশি সরকার ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও নানা প্রশ্ন তৈরি করতে পারে। কারণ রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন, তার ছবি সরিয়ে ফেলা হলে এর পেছনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বার্তা কী—তা বোঝার চেষ্টা করবে সবাই।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা ব্যাখ্যা দেয়নি। মন্ত্রণালয়ের ভেতরে কর্মরত কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতেও অনিচ্ছুক। শুধু জানানো হয়েছে, এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা অনুসরণ করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ কেবল প্রশাসনিক বিষয় নয়, বরং এর পেছনে রাজনৈতিক তাৎপর্যও থাকতে পারে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য ও কূটনৈতিক বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রেই এমন নির্দেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন—রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ পদে থেকে কেন হঠাৎ তার ছবি সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? সরকারের পক্ষ থেকে এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দেওয়া পর্যন্ত বিতর্ক ও কৌতূহল আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।