বিদেশ পালানোর আশঙ্কা! নানক ও স্ত্রী-কন্যাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের নিষেধাজ্ঞা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, তার স্ত্রী ও কন্যাসহ ১৩ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে—এই..

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, তার স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু এবং কন্যা এস আমরীন রাখীসহ মোট ১৩ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।

১৪ মে, বুধবার, দুদকের চারটি পৃথক আবেদনের ভিত্তিতে এই আদেশ দেন বিচারক জাকির হোসেন গালিব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।

কারা রয়েছেন এই তালিকায়?

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু নানক ও তার পরিবার নয়, আরো আছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান

  • তার ছেলে ও ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক কাজী খুররম আহমদ

  • মশিউর রহমান, মশিউর সিকিউরিটিজ সিটি সেন্টারের চেয়ারম্যান

  • পরিচালক মোগল জান রহমানজিয়াউল হাসান চিশতী

  • ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কাসেম কাসু, তার স্ত্রী আসমা কাসেম এবং কন্যা উম্মে কুলসুম

দুদকের অভিযোগ ও তদন্ত প্রক্রিয়া

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীর কবির নানকের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত চলাকালীন দুদক গোপন সূত্রে জানতে পারে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। তারা দেশ ত্যাগ করলে তদন্তে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হবে। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও কাজী আকরাম

অন্যদিকে, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ভুয়া শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, এবং প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণে দুর্নীতি করেছেন

তাকে ঘিরে অনুসন্ধান করছে তিন সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি পৃথক টিম। অভিযোগ রয়েছে, তার ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ অর্থের গরমিল ও আত্মসাত ঘটেছে।

দুদকের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

দুদক জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি দেশ ত্যাগ করেন, তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা বা সম্পদের উৎস যাচাই করা সম্ভব হবে না। অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থেই আদালতের কাছে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানানো হয়। আদালত আবেদনগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে সকলের বিরুদ্ধেই বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ করেন

দুদক জানিয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর নজরদারি রাখা হবে। যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও রয়েছে।

 

এই নিষেধাজ্ঞা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, সাধারণ নাগরিকদের কাছেও প্রশ্ন উঠছে—এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এবং আদৌ তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন কি না?

Nenhum comentário encontrado


News Card Generator