close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সংস্কারের অংশ হিসেবে, বিচারকদের সম্পদের হিসাব এখন থেকে অবসর নেওয়ার ছয় মাস আগে এবং প্রতি তিন বছর পরপর জমা দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে। এই নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিচারকেরা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। আদালতের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এমন একটি প্রস্তাব সম্প্রতি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রতিবেদনটির মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রমের সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল একটি স্থায়ী অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থা চালু করবে, যাতে সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, আদালত কর্মচারী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। এসব অভিযোগ পর্যালোচনা করার জন্য নিয়মিত ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে, সাবেক বিচারকদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতির জন্য বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে।
বিচার বিভাগের দুর্নীতি: সম্ভাব্য কারণ
‘বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রতিরোধ’ অধ্যায়ে, কমিশন বিচার বিভাগের দুর্নীতির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে স্বল্পসংখ্যক বিচারকের উপস্থিতি, দায়িত্বের অভাব, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, এবং আদালত কর্মচারীদের দুর্নীতির উল্লেখ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে ২ হাজার ৩০০টিরও বেশি বিচারক রয়েছেন, যাদের মাধ্যমে ৪৩ লাখ মামলা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া, বিচার বিভাগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগের বিষয়েও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, নাগরিক এবং আইনজীবীদের ৮৪ শতাংশ এবং ৯১ শতাংশই আদালত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: অভিযোগ বাক্স ও তদন্ত কমিটি
বিচার বিভাগের দুর্নীতি রোধের জন্য, সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন ও ই-মেইল মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা প্রতি তিন মাস পরপর অভিযোগ পর্যালোচনা করবে।
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সুপারিশও করা হয়েছে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন মন্তব্য করেছেন যে, জরিপের ফলাফলে বিচারব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার জনআকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই প্রস্তাবনাগুলো বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
לא נמצאו הערות