প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের লক্ষ্য আধিপত্য নয়, বরং রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে সমতা প্রতিষ্ঠা করা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগ কখনোই রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভার ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়নি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ কোনোভাবেই বিচার বিভাগীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নয়; বরং এটি রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সমতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস।
রবিবার (তারিখ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে প্রয়াত সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এ জে মোহাম্মদ আলী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস।
বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, গত ৫০ বছর ধরে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্যান্য দুটি অঙ্গের সঙ্গে সমতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। এই সচিবালয়ের দাবি মূলত সমতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।” তিনি আরও বলেন, “বিচার বিভাগ কখনোই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী অঙ্গ হয়ে ওঠেনি, যদিও এ দীর্ঘ সময় ধরে এটি কার্যকরভাবে কাজ করে গেছে এবং অনেক সময় রাষ্ট্রের একমাত্র কর্মক্ষম অঙ্গ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে তিনি একটি অবিচ্ছেদ্য সাংবিধানিক প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্বাধীন বিচার বিভাগের উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটি শক্তিশালী, দৃশ্যমান এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা।
তিনি ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক সংস্কার আইনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এই আইন ক্ষমতার বিভাজনের ভারসাম্য রক্ষা করে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখেছিল। একইসঙ্গে এটি প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগকে আরও দৃঢ় করেছিল।
এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মৃতিচারণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন, অবকাঠামোগত ভিত্তি ছাড়া স্বাধীনতা একপ্রকার অলীক কল্পনা। তিনি মনে করতেন, কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয় যতক্ষণ না আদালত সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মো. শরিফউদ্দিন চাকলাদার। প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।