আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ভুয়া মামলা যেন একটি নিত্যদিনের শব্দ হয়ে উঠেছে। তবে সেই কালো অধ্যায়ের ইতি টানার সম্ভাবনার কথা জানালেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আজ রোববার, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির একটি যুগান্তকারী সংশোধন অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে ভুয়া মামলা বা ভুয়া আসামিরা প্রাথমিক তদন্তেই রেহাই পেতে পারেন।
নতুন এই সংশোধন অনুযায়ী, কোনো মামলায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি যদি আসলেই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হন, এবং তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আদালত দ্রুতই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। অধ্যাপক নজরুল বলেন, “এতদিন ভুয়া মামলায় নিরপরাধ মানুষ বছরের পর বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু এই নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে পুলিশ ও বিচার বিভাগ একসঙ্গে কাজ করে প্রিট্রায়াল স্টেজেই নির্দোষদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে।”
তিনি জানান, কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি) বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন চাওয়া জরুরি, তাহলে তিনি সেটি চাইতে পারবেন। সেই প্রতিবেদনে যদি দেখা যায় যে কোনো আসামির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ নেই, তবে ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মামলার দায়মুক্তি দিতে পারবেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেউ যদি মামলার শুরুতেই নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং রেহাই পান, এরপর যদি ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ পুনরায় তার নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী, এই পদক্ষেপে ভুয়া মামলা ও মামলা বাণিজ্যের কালো দিক অনেকটাই হ্রাস পাবে। অনেকে অহেতুক হয়রানির শিকার হতেন, তাদের জন্য এটি হবে এক বিশাল স্বস্তির সংবাদ।”
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, “তদন্ত কোনোভাবেই থেমে থাকবে না। বরং এটি আরও নির্ভুল এবং নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হবে।”
এই সংশোধনের ফলে যেমন পুলিশ প্রশাসনের উপর নিরপেক্ষ তদন্তের দায়িত্ব আরও বাড়বে, তেমনি বিচার বিভাগের কাছে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করার একটি কার্যকর হাতিয়ার তৈরি হবে। অনেক সময়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে — এই ধরনের অনৈতিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে আনতেই মূলত এই পদক্ষেপ।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, “এটি বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ফেরাতে সহায়ক হবে। সাধারণ মানুষ যাতে আইন ও প্রশাসনের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, সে দিকটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।”
প্রেস ব্রিফিং শেষে একাধিক মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর অভাব ছিল, যার ফলে মামলা বাণিজ্য ও ভুয়া মামলার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। এখন এই সংশোধনের মাধ্যমে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এটি একটি গেম-চেঞ্জার মুহূর্ত। এখন থেকে আর কোনো নিরপরাধ মানুষকে বছরের পর বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হবে না। যদি এই সংশোধনী সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে এটি দেশের বিচারব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে — যেখানে সত্য, ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা অগ্রাধিকার পাবে।



















