close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভুয়া জমজমের কারখানা ফাঁ'স: ধর্মীয় বিশ্বাসকে হাতিয়ার করে প্র'তা'রণা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়ে 'জমজম' নামে বোতলজাত ট্যাপের পানি বিক্রি করছিল এক প্রতারক। শারজাহে গোপন কারখানায় তৈরি এসব ভুয়া জমজম পানির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন। বিস্ত..

বিশ্ব মুসলিম সমাজের কাছে জমজমের পানি শুধুমাত্র একটি পানীয় নয়—এটি একটি পবিত্র স্মারক, এক অনন্য বরকতের উৎস। হজ ও উমরাহ থেকে ফেরা মুসলমানদের হাতভর্তি করে আনা জমজমের পানি যেন আত্মীয়স্বজনদের জন্য আশীর্বাদের উপহার। অথচ এই পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল এক ব্যক্তি, যাকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ নগর কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বস্ত আরব সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস জানিয়েছে, শারজাহ শহরের একটি আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে পানি বোতলজাত করার একটি গোপন কারখানার সন্ধান পাওয়া গেলে, অভিযান চালিয়ে একজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার অপরাধ—নিতান্ত ট্যাপের পানি বোতলে ভরে, গায়ে জমজমের লেবেল লাগিয়ে তা বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা।

প্রশাসনের ভাষ্যমতে, প্রথমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করে, একটি বাড়ি থেকে সুশৃঙ্খলভাবে বোতলজাত পানি গাড়িতে তোলা হচ্ছে। সন্দেহবশত নজরদারি চালাতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আসল চিত্র। বোতলের গায়ে ছিল 'জমজম' লেখা লেবেল, ভেতরে ছিল সাধারণ ও সন্দেহজনক পানি। অভিযান চালিয়ে প্রতারককে হাতেনাতে ধরে ফেলে প্রশাসন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় অসংখ্য জমজম লেবেল লাগানো বোতল ও কার্টন—সবই ভরা হয়েছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে।

লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের আড়ালে প্রতারণা

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি নিজের ব্যবসার লাইসেন্সের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই জালিয়াতি চালিয়ে আসছিলেন। জানা যায়, তিনি 'আরটি মিনারেল ওয়াটার ট্রেডিং' নামে একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক। ওই লাইসেন্সকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিনি বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করছিলেন। একইসঙ্গে তৈরি করছিলেন ভুয়া ইনভয়েস ও বিল, যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয় আরও সহজে।

তার এই প্রতারণা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং ওয়াটার স্টোর, স্থানীয় দোকান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও এসব বোতল বিক্রি হচ্ছিল বলে জানিয়েছে প্রশাসন। পবিত্র ‘জমজম’ নামের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে কৌশলে ব্যবহার করে তিনি বিপুল অংকের লাভ করছিলেন।

প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ

শারজাহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগ অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে। বাড়িটি সিলগালা করা হয়েছে এবং কারখানার যাবতীয় সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তকে তদন্তের জন্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

শারজাহ সিটি মিউনিসিপ্যালিটির মহাপরিচালক ওবায়েদ আল তেনেইজি বলেন, “কমিউনিটির স্বাস্থ্য ও ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষতি করে এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে আমরা বরাবরই কঠোর অবস্থানে রয়েছি। জনগণকে আমরা সতর্ক করছি—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অবৈধ উৎস থেকে কোনো খাদ্য বা পানীয় পণ্য কেনার আগে অবশ্যই উৎস যাচাই করুন।”

বিশ্বাসের ওপর আঘাত: ধর্ম ও অর্থ দু’দিকেই ক্ষতি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রতারণা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং ধর্মীয় অনুভূতির ওপরও সরাসরি আঘাত। জমজমের মতো পবিত্র জিনিসকে ভুয়া আকারে তুলে ধরার মানেই হচ্ছে মানুষের বিশ্বাসকে অবমূল্যায়ন করা। এটা শুধু প্রতারণা নয়, বরং এক ধরনের মানসিক ও ধর্মীয় নির্যাতনও বটে।

এই ঘটনার পর মুসলিম বিশ্বের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় প্রতীক বা বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার প্রতারণা বা জালিয়াতি বরদাস্তযোগ্য নয়। তারা এও দাবি করেছেন, এমন অপরাধের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করা দরকার।এই ঘটনা প্রমাণ করে, শুধু ধর্ম নয়—অন্ধ বিশ্বাসকেও অনেক সময় প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই সচেতনতা, যাচাই-বাছাই ও প্রশাসনের কড়া নজরদারি ছাড়া সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। শারজাহ প্রশাসনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং তা অন্য দেশগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত হতে পারে।

No comments found


News Card Generator