ভোটের দিন ইন্টারনেট বন্ধ নয়, সচল রাখতে করণীয় নির্ধারণের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ভোটের দিন যেন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ না করা হয়, বরং তা সচল থাকে—এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন তিনি।
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজিসহ বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, "প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, আগের মত যেন এবার ভোটের দিন ইন্টারনেট বন্ধ না করা হয়। বরং ইন্টারনেট সচল রাখার জন্য কী কী করণীয়, তা নির্ধারণ করতে হবে এখনই।
এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আগে বিভিন্ন নির্বাচনে সহিংসতা বা গুজবের অজুহাতে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হতো, যা জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার এবং গণমাধ্যমের কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াত।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল প্রস্তুতি শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কোনো ধরণের শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি আরও জানান, “ডিসি, এসপি, ওসি এবং ইউএনও পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পুনর্বিন্যাস বা রিশাফল করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এই রিশাফল হবে র্যান্ডম পদ্ধতিতে, যেন নিরপেক্ষতা বজায় থাকে এবং নির্বাচনী এলাকায় কারও প্রভাব খাটানোর সুযোগ না থাকে।”
নির্বাচনের সময়সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সব সংস্কার ও প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজানের আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক করবে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সচল রাখার নির্দেশনা প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ ও নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের র্যান্ডম রিশাফল রাজনৈতিক প্রভাব মুক্তভাবে নির্বাচন আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌ কি বাস্তবে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে? নাকি আগের মতই শেষ মুহূর্তে আবার ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসবে?
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা ও কঠোর পদক্ষেপ থাকতে হবে।