চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। সার্বিকভাবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এরপরই শুরু হয় ভোট গণনা। নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ.কে.এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ, যা শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দেয়।
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ দেখা গেছে। ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে বিভিন্ন অনুষদ ও হলে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে আসেন। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় পাঁচটি অনুষদের ১৫টি কেন্দ্রে, যেখানে ৬০টি কক্ষে স্থাপন করা হয়েছিল মোট ৬৮৯টি বুথ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবার মোট ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৭ জন। ভোটগ্রহণে ব্যবহার করা হয় ঐতিহ্যবাহী ব্যালট পেপার, আর গণনা করা হচ্ছে আধুনিক ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। পুরো ভোট গণনা প্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থাপিত ১৪টি এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছভাবে পুরো প্রক্রিয়া দেখতে পারেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “চাকসু নির্বাচনে হাতে লাগানো অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও সার্বিকভাবে ভোটগ্রহণ ছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ এবং শৃঙ্খল অংশগ্রহণ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।”
চাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ৪১৫ জন, আর হল সংসদে অংশ নিয়েছেন ৪৯৩ জন প্রার্থী।
দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন নেতৃত্ব গঠনের পথ খুলে দেবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা আশা করছেন, নতুন প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের দাবি ও সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের সার্বিক তদারকি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি চালানো হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পর্যবেক্ষক টিম মাঠে ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতের মধ্যেই ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হতে পারে। শিক্ষার্থীরা উৎসুক দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছেন নিজেদের প্রিয় প্রার্থীদের জয়জয়কারের জন্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির নতুন দিগন্তই নয়, বরং দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র নেতৃত্বের নতুন ধারা গঠনের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।