ভৈরবে একসঙ্গে ৩ পুত্রসন্তানের জন্ম, পরিবারে খুশির মাঝেও দুশ্চিন্তার ছাপ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভৈরবের একটি হাসপাতালে এক গৃহবধূ একসঙ্গে জন্ম দিলেন তিনটি সন্তান—দুই ছেলে, একটি মেয়ে। পরিবারে খুশির জোয়ার বইলেও, নতুন জীবনের চাপ আর মায়ের অসুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে স্বজনদের।..

ভৈরব, কিশোরগঞ্জ — জীবন অনেক সময় এমন কিছু উপহার নিয়ে আসে, যা আনন্দের সঙ্গেই অজানা দুশ্চিন্তারও দরজা খুলে দেয়। তেমনই একটি বিরল ঘটনার সাক্ষী হলো কিশোরগঞ্জের ভৈরব। এখানে এক গৃহবধূ একসঙ্গে তিনটি নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন—দুইটি ছেলে ও একটি মেয়ে। এই বিরল ঘটনায় যেমন পরিবার ও এলাকার মানুষজন আনন্দে উদ্বেলিত, তেমনি মায়ের শারীরিক দুর্বলতা আর ভবিষ্যৎ অভিভাবকত্বের চিন্তা ঘিরে ধরেছে পরিবারকে।

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে, শহরের স্বনামধন্য বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান স্বদেশ হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড-এ। স্থানীয় রামনগর গ্রামের সৌদী প্রবাসী রবিন খানের স্ত্রী সোমা আক্তার প্রসব ব্যথা নিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। দ্রুত চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জরুরি আল্ট্রাসোনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত হন, গর্ভে রয়েছে তিনটি সন্তান।

চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাতেই সফলভাবে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। ডা. হরিপদ সাহা ও ডা. রাজিবের নেতৃত্বে অপারেশন সম্পন্ন হয় এবং ভূমিষ্ঠ হয় একসঙ্গে তিনটি নবজাতক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ইনচার্জ মোছা. মোমেনা বেগম।

হাসপাতালের প্রসূতি ও নবজাতক বিভাগ এখন যেন উৎসুক জনতার মিছিল। এমন বিরল ঘটনা দেখার জন্য অনেকেই ভিড় জমিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতক তিনটি এখন পর্যন্ত সুস্থ রয়েছে, তবে মা সোমা আক্তার কিছুটা শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

সোমার ছোট ভাই সহিদ মিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমার বোনের আগেও দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আমরা একটি পুত্রসন্তানের জন্য দোয়া করছিলাম। মহান আল্লাহ আমাদের শুধু ছেলে নয়, দুই ছেলে ও এক মেয়ে দিয়েছেন। আমরা আবেগে আপ্লুত।” তিনি আরও জানান, প্রবাসী ভাই রবিন খান ভিডিও কলে সন্তানদের মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এটি যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত।

তবে এই খুশির মুহূর্তেই শুরু হয়েছে নতুন দুশ্চিন্তা। অভিভাবকরা ভাবছেন—একসঙ্গে তিন সন্তানকে লালন-পালন, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ভবিষ্যতের ব্যবস্থা কীভাবে সম্ভব হবে? সোমার পরিবার তুলনামূলকভাবে নিম্ন মধ্যবিত্ত। প্রবাসী স্বামীর আয় দিয়ে এত বড় পরিবার চালানো এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, মাত্র কয়েক দিন আগেই—১৭ ফেব্রুয়ারি—এই একই হাসপাতালে একসঙ্গে তিনটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছিল। এরকম ব্যতিক্রমী ঘটনার ধারাবাহিকতা চিকিৎসকদের মাঝেও কৌতূহল জাগিয়েছে।

স্বদেশ হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ মোমেনা বেগম বলেন, “নবজাতকদের মধ্যে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। তাদের নাম এখনো রাখা হয়নি। তবে ওজন ও শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। মায়ের শরীর কিছুটা দুর্বল হলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন।”

এমন ঘটনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যেমন একটি সুখবর—তেমনি মা ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক সহায়তা ও স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি।

コメントがありません


News Card Generator