লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই- বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দিন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন। এ কথা আগেও বলেছি, এখনো বলছি।"
সোমবার বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে আয়োজিত তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিস্তার পানি সংকট ও ভারতের ভূমিকা
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, "শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি নদী আছে যেগুলো ভারত থেকে আমাদের দেশে আসে। উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, অথচ বাংলাদেশের কৃষকরা ধান ফলাতে পারছে না, ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না, স্থানীয় বাসিন্দারা জীবিকা হারাচ্ছেন।"
তিনি বলেন, "এই অবিচার আর চলতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য পানির হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। ভারত যদি প্রকৃত অর্থে আমাদের বন্ধু হতে চায়, তাহলে তাদের এই পানি সমস্যার সমাধান করতেই হবে।"
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান
সরকারকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, "অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কথায় কথায় নিরপেক্ষতার কথা বলে। কিন্তু এই নিরপেক্ষতা ততক্ষণ পর্যন্ত যথাযথ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। এই সরকারকে ভারতের সামনে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে হবে।" তিনি আরও বলেন, "এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"
তিস্তা বাঁচানোর আন্দোলনে রাজনৈতিক সংহতি
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান এবং বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু।
এছাড়া জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক এবং নদীপারের ভুক্তভোগী নুর বকস উপস্থিত ছিলেন।
প্রভাবশালী নেতাদের উপস্থিতি ও আন্দোলনের ব্যাপকতা
আন্দোলনের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথকভাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
তিস্তা পাড়ের জনগণের একযোগে আন্দোলন
তিস্তা নদীর দুই পাড়ের পাঁচটি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিস্তাপারের মানুষ তাদের দাবি আদায়ে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই দলে দলে কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর। দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামতেই প্রতিটি পয়েন্ট কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
তিস্তার ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সর্বদলীয় আন্দোলন
তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও এখনো কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। এই সংকট নিরসনে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে। আন্দোলনকারীরা জানান, ন্যায্য পানি না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, বরং এটি একটি সর্বদলীয় এবং জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে এই আন্দোলন আরও ব্যাপক হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতারা।
Aucun commentaire trouvé