close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের ডিফেন্স ফোর্সেসের সংঘর্ষে নিহত ১০, সীমান্তে আতঙ্ক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে নজিরবিহীন সংঘর্ষে প্রাণ গেল পিকেপি গোষ্ঠীর ১০ সদস্যের, যাদের মধ্যে তিনজন কিশোরও রয়েছে। এ ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। নিহতদের মরদেহ দেখে ক্ষোভে ফুঁসছ..

সীমান্তে নতুন আগুন—শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ল রক্তের গন্ধ। ভারতীয় বাহিনী ও মিয়ানমারের পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) সহযোগী গোষ্ঠী পিকেপির মধ্যে এক ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০ জন, যাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন কিশোর। ১৪ মে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ভারতের মণিপুর রাজ্যের চান্দেল জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়।

আল জাজিরা জানায়, সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে হয়ে ওঠে যে, ভারত ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র মতানৈক্য এবং পারস্পরিক অভিযোগের পালা। ঘটনাটি কেবল দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যু নয়—এটি এখন কূটনৈতিক টানাপড়েনেরও কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, তারা একটি গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে গিয়েছিল। অভিযানের সময় ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা’ ভারতীয় আসাম রাইফেলস বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ভারতীয় বাহিনীও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই ১০ জন নিহত হয়। এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও একটি রকেটচালিত গ্রেনেড। এই দাবি থেকেই ভারতের অবস্থান পরিষ্কার—তাদের মতে, এটি আত্মরক্ষামূলক পাল্টা অভিযান ছিল।

তবে পুরো ঘটনাকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার—ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG)। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, নিহতরা কোনো ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন না। বরং তাদের ভারতীয় মাটিতে আটক করে বর্বরভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি মৃতদেহগুলোর চিত্র এতটাই বিভীষিকাময় ছিল যে, সেখানে পচন ও পোকা ধরে গিয়েছিল—এটি দেখেই প্রমাণ মেলে তারা দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।

ঘটনার পর মিয়ানমার সীমান্তবর্তী তামু অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক। স্থানীয়রা জানান, এত বড় ও সহিংস ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। ফলে এ অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা ও ভয়ের ছায়া। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সেইসব শরণার্থীরা, যারা মিয়ানমারের সেনা দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, ১২ মে পিকেপি গোষ্ঠীর এই ১০ সদস্য মিয়ানমারের সেনা হামলা এড়িয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তাদের ক্যাম্পের অবস্থান সম্পর্কে ভারতীয় বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল এবং এমনকি ভারতীয় সেনারা সেই ক্যাম্পে পরিদর্শনেও গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক সংগঠনের সদস্য থিদা (ছদ্মনাম)। এই তথ্য সামনে আসায় ভারতীয় বাহিনীর বক্তব্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাল্টা দাবি করেছে—সীমান্ত এলাকায় চলমান কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বাধা দেওয়ার জন্যই বিদ্রোহীরা ভারতীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, আর সেই কারণেই পাল্টা অভিযানে তারা নিহত হয়। অর্থাৎ, ভারত এ ঘটনাকে একটি 'সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা'র অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।

এই ঘটনার পর নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে সীমান্ত বেড়া নিয়ে। শত শত বছর ধরে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে উন্মুক্ত চলাচলের সংস্কৃতি ছিল। দুই দেশের বহু নৃগোষ্ঠী একে অপরের সঙ্গে রক্ত-সম্পর্কে আবদ্ধ। এখন হঠাৎ করেই ভারত সীমান্তে কাঁটাতার নির্মাণ শুরু করায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও বিদ্বেষ তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত এইভাবে ‘ভৌগোলিক বিভাজন’ তৈরি করে দুইপারের জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐতিহ্যগত সম্পর্ককে ধ্বংস করছে।

এ পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে—ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে বিরাজমান দীর্ঘদিনের ‘নীরব সমঝোতা’ এখন ভাঙনের পথে। ভারতের কড়া পদক্ষেপ এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।



এই সংঘর্ষ শুধু ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা নয়—এটি ভারত-মিয়ানমার কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের নতুন এক অন্ধকার অধ্যায়ের শুরু হতে পারে। সীমান্তে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

Aucun commentaire trouvé