close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে ইতিহাসে সর্বোচ্চ সামরিক পদোন্নতি পাকিস্তান সেনাপ্রধানের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির পেলেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক পদোন্নতি। এবার তিনি ‘ফিল্ড মার্শাল’—পাক সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ। কী কারণে এই পদোন্নতি, কী বার্তা দ..

ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নজিরবিহীন পদোন্নতি, ইতিহাস গড়লেন আসিম মুনির

দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশের মাঝে যখন আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে, ঠিক তখনই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ইতিহাসের এক নাটকীয় অধ্যায়ের সূচনা হলো। ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘর্ষের জের ধরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক পদোন্নতি পেলেন পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। তিনি এখন দেশের প্রথম 'ফিল্ড মার্শাল'—এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সামরিক পদ।

মঙ্গলবার (২০ মে) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স। পদোন্নতির পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনায় মুনিরের “অসাধারণ নেতৃত্ব ও কৌশলগত সাফল্য”।

যুদ্ধের উত্তাপে পদোন্নতির ঝলক

চলতি মে মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হঠাৎ করেই বাড়ে সামরিক উত্তেজনা। সীমান্ত এলাকায় মিসাইল হামলা, ড্রোন ব্যবহার, গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তান দাবি করে, তারা এই সংঘর্ষে বিজয়ী হয়েছে এবং ভারতের একাধিক সামরিক পোস্ট গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় দ্রুতগতিতে রাজনৈতিক এবং সামরিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তান সরকার সেনাপ্রধান মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম পিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে এই পদোন্নতির অনুমোদন দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে জেনারেল মুনিরের কৌশলগত নেতৃত্ব এবং স্নায়ুযুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর মনোবল অটুট রাখার ভূমিকা ছিল অনন্য। এ কারণেই তাকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।”

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে স্থায়ী উত্তেজনা

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসলেও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দু’দেশের সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। সেনাপ্রধান মুনির এই মুহূর্তে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু যদি আমাদের সম্মান ও সার্বভৌমত্বে কেউ আঘাত করে, তাহলে জবাব দিতে আমরা একটুও দ্বিধা করব না।”

অন্যদিকে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের চালানো সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনো শেষ হয়নি। নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, পাকিস্তানের ভেতরে আরও গভীর অভিযান চালানোর পরিকল্পনা এখনো টেবিলে রয়েছে। অর্থাৎ, সীমান্তে উত্তেজনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত মনে হলেও বাস্তবিকভাবে তা এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে যে কোনো সময়।

কে এই আসিম মুনির?

জেনারেল আসিম মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের ১১তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার স্থলাভিষিক্ত হন। তার নিয়োগ শুরুতেই আলোচনায় আসে, কারণ সেনাবাহিনীতে তার ভূমিকা শুরু থেকেই ছিল কৌশলনির্ভর এবং ব্যতিক্রমী।

২০২৪ সালের নভেম্বরে তার মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে বিরল একটি সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক মহলে তখন থেকেই আলোচনা চলছিল যে, সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে নতুন ধারা চালু করতে চাইছে সরকার।

এর আগে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার সময় গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মুনির। ওই ঘটনায় ভারতের ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন। হামলার পর ভারতের জবাবে ‘বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক’ হয়েছিল, যা দুই দেশের সম্পর্কে মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলওয়ামা-পরবর্তী উত্তেজনায় গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে জেনারেল মুনিরের ভূমিকা ছিল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী।

রাজনৈতিক বার্তা ও ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত

ফিল্ড মার্শাল পদে আসিম মুনিরের এই পদোন্নতি একদিকে যেমন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তার বার্তা দিচ্ছে, তেমনি এটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। সামরিক শক্তিকে সামনে রেখে সরকার নিজেদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চাইছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে, ভারতের দিক থেকেও কড়া প্রতিক্রিয়া আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তে পুনরায় সংঘর্ষ বা অনুপ্রবেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেতে পারে।



ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও এক অজানা অনিশ্চয়তার দিকেই যাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের পদোন্নতি শুধু সামরিক বা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। এখন শুধু সময়ই বলে দেবে—এই পদোন্নতি কি যুদ্ধ প্রতিরোধ করবে, নাকি আরও সংঘাতকে উসকে দেবে!

Aucun commentaire trouvé