close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের সঙ্গে যু দ্ধ শেষে চীন সফরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কাশ্মীরে রক্তাক্ত সংঘর্ষ, যুদ্ধবিরতি, আর তারপরই চীন সফরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী! শুধু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নয়, আফগানিস্তানকে নিয়েও শুরু হচ্ছে ত্রিপক্ষীয় কূটনৈতিক মহড়া—দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈর..

চীনে পাকিস্তানের কূটনৈতিক তৎপরতা, যুদ্ধবিরতির পর শুরু নতুন অধ্যায়

দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের আঁচ যখন কিছুটা প্রশমিত, তখনই শুরু হয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতার নতুন অধ্যায়। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত সংঘাত এবং যুদ্ধবিরতির রেশ কাটতে না কাটতেই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার চীনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সফরে যাচ্ছেন। চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে নিয়ে তৈরি হতে চলেছে এক নতুন কূটনৈতিক কাঠামো, যার প্রভাব পড়বে পুরো অঞ্চলের রাজনীতিতে।

চীন সফর ও বৈঠকের প্রেক্ষাপট

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ইসহাক দার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত বেইজিং সফর করবেন। সফরকালীন তিনি চীনা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন এবং আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক।

এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলমান উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি এটি চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্বের ‘আয়রন ব্রাদারহুড’-এর একটি প্রতীকী বহিঃপ্রকাশও বটে।

কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন রূপরেখা

চীনে ইসহাক দারের সফরের সময় দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পূর্ণ পরিসর পর্যালোচনা করবে। তারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করবে। আলোচনায় উঠে আসবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI), চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (CPEC), নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক উদ্যোগ।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের সমর্থন নিশ্চিত করে ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মধ্যে রাখা।

আফগানিস্তান প্রসঙ্গ এবং ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

এই সময়েই ২০ মে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকিও বেইজিংয়ে পৌঁছাবেন। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে এক গুরুত্বপূর্ণ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক—চীন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান অংশ নেবে এই বৈঠকে। আলোচনায় থাকছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, জঙ্গিবাদ দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা।

এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে চীন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক কাঠামো তৈরির প্রয়াস নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে ভারতের প্রভাবকে ব্যালেন্স করার কৌশল গ্রহণ করছে বেইজিং।

সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রতিক্রিয়া

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত মাসে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর। ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।

পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে, আর পাকিস্তান পাল্টা জবাবে চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ানুম-মারসুস’। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের ৬টি যুদ্ধবিমান ও বহু ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানের ৫৩ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন সেনাসদস্য।

এই সহিংসতা অবশেষে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে গড়ায়, যার ফলে আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে।

চীনের উষ্ণ সমর্থন

যুদ্ধ চলাকালে চীন প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানায়। বেইজিংয়ে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানকে ‘আয়রন ব্রাদার’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ে চীন ও পাকিস্তান সব সময় একে অপরের পাশে থেকেছে।’

চীনের এই অবস্থান শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং ভবিষ্যতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কাঠামোতেও প্রতিফলিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

চীনে ইসহাক দারের সফর দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক পটপরিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করতে চলেছে। আফগানিস্তানকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় কাঠামো গঠনের মাধ্যমে চীন তার আঞ্চলিক নেতৃত্বের শক্তি জোরদার করছে।

এদিকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের আগ্রাসী অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত। সাম্প্রতিক সংঘাতের পর চীনের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য আরও দৃঢ় করে তারা এক নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে।

No comments found


News Card Generator