close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের আগমন, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথম, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অবরুদ্ধ সম্পর্কের পুনরুজ্জীবনকে চিহ্
বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের আগমন, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথম, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অবরুদ্ধ সম্পর্কের পুনরুজ্জীবনকে চিহ্নিত করেছে। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন সূচিত করেছে, যা ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনাকে প্রবল করছে। গত কয়েক মাসে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাসিনার অধীনে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, তবে তার পদত্যাগের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। হাসিনার বিদায়ে ভারতীয়দের জন্য এই পরিবর্তন একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে, কারণ হাসিনা ছিলেন ভারতের অন্যতম শক্তিশালী মিত্র। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব, যা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। হাসিনার শাসনামলে ভারত এবং বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, যেখানে ভারতের জন্য বিশেষভাবে সুবিধাজনক ছিল বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণ, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্য আশ্রয়ের অনুপস্থিতি এবং ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত বাংলাদেশ। তবে এসব সত্ত্বেও কিছু অব্যক্ত উত্তেজনা ছিল, যা হাসিনার পদত্যাগের পর আরও স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়টি হলো, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন এবং সীমান্তবর্তী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি, যা ২০১৪ সালের পর আরো জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিজেপি সরকার ইসলামফোবিয়া ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রচার চালানোর পর, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে একজন হিন্দু সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং উভয় দেশ একে অপরকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। আরেকটি বিরোধ যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা হলো তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি। যদিও গঙ্গা নদীর বিরোধ ১৯৯৬ সালে সমাধান হয়েছিল, তিস্তা নদী নিয়ে কোন সমঝোতা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সরকারের বিরোধিতা এই চুক্তি বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করছে। এছাড়া, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উত্থান এবং এর পরিণতিতে দেশটির হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর এর প্রভাব ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি তাদের নিজস্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পুনর্বিন্যাসের জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। বিশেষ করে জামায়াত-ই-ইসলামী, যদি বিএনপির সঙ্গে আবারও জোট করে, তবে ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি তার নীতির পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করবে। ভারতের অতিরিক্ত নির্ভরতা হাসিনা ও আওয়ামি লীগের প্রতি এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপসংহারে, ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপগুলির ওপর। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন ভারতকে নতুনভাবে পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করতে পারে, এবং এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পটভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली