ভারতের নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট চত্বরে বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্যদের হাতাহাতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দুই বিজেপি এমপি মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতদের মধ্যে ওডিশার প্রতাপ সারঙ্গি এবং উত্তর প্রদেশের মুকেশ রাজপুতকে দ্রুত রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
আহত দুই এমপির শারীরিক অবস্থা
রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অজয় শুক্লা জানিয়েছেন, প্রতাপ সারঙ্গির মাথায় গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে স্থিতিশীল রাখতে সেলাই দিতে হয়েছে। এছাড়া, আহত মুকেশ রাজপুত সংঘর্ষের সময় মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারান। পরে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। দুজনেরই রক্তচাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক।
সংঘর্ষের কারণ ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বি আর আমবেদকারকে অবমাননার অভিযোগ ঘিরে। এনডিএ জোটের সদস্যরা বিরোধীদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বিজেপি দাবি করে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংঘর্ষের সময় প্রতাপ সারঙ্গিকে ধাক্কা দেন, যা তাদের আহত হওয়ার প্রধান কারণ।
বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে রাহুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আপনি কি লজ্জিত নন, রাহুল? আপনি একজন বৃদ্ধ মানুষকে ধাক্কা দিয়েছেন। এটা কি আপনার গুন্ডাগিরি নয়?”
অন্যদিকে, রাহুল গান্ধী অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেন, “বিজেপি সংসদ সদস্যরাই আমাকে বাধা দেন, ধাক্কা দেন এবং হুমকি দেন। আমি তাদের আচরণে হতবাক।”
সরকারি পর্যায়ে পদক্ষেপ
সংঘর্ষের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবাজি সিং চৌহান এবং প্রহ্লাদ যোশী হাসপাতালে যান এবং আহত এমপিদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। শিবাজি সিং চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতাপ সারঙ্গির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তার মাথায় কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে এবং তার সুস্থতার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বিরোধী দল ও বিজেপির মধ্যে ইতিমধ্যেই মুখোমুখি সংঘাতের ইতিহাস থাকলেও এই ঘটনা দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সংঘর্ষের ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘর্ষ আগামী নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
এই সংঘর্ষ কি শুধুই রাজনৈতিক উত্তাপ নাকি এর পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র আছে—এটাই এখন দেখার বিষয়।
कोई टिप्पणी नहीं मिली