জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ভারতে গেছেন বলে যে গুজব সামাজিকমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে কিডনি জটিলতার কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। আগামী ৭ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন নিজেই।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়ে ডা. তাহের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি নিউইয়র্ক থেকে শিকাগোতে চিকিৎসার জন্য যান। কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে এবং গত এপ্রিলেও যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগের দিনও তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় যে ডা. তাহের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গেছেন এবং সেখানে ভারতীয় সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ছবিতে দেখা যায়, তাহের এবং উপেন্দ্র দ্বিবেদীর করমর্দনের দৃশ্য, যা “জিয়া সাইবার ফোর্স” নামের একটি প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, শনিবার রাত ৯টায় দিল্লির একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ভারতের রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তাহের।
এই পোস্ট শেয়ার করে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, “মুখে ভারত বিরোধিতা, আর তলে তলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে ব্যস্ত জামায়াত।” তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মুন্না তার পোস্টটি মুছে ফেলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “একটি দলের নেতাকর্মীরা জামায়াতের বিরুদ্ধে যেসব গুজব ছড়াচ্ছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অথচ তারাই আবার জামায়াতের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ আনছেন। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে শনিবার সকালেও আমাদের কথা হয়েছে। তিনি আগেই অসুস্থ ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। শারীরিকভাবে তিনি এখন অনেক দুর্বল।
তিনি আরও জানান, “তাহের সাহেবের দেশে ফেরার সম্ভাব্য তারিখ ৭ অক্টোবর। চিকিৎসা সম্পন্ন করে তিনি দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ডা. তাহের দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। এই বছরের এপ্রিলে তিনি যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সফর শেষে তিনি নিউইয়র্ক থেকে শিকাগোতে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই ব্যবহার করে ভুয়া ছবি তৈরি ও গুজব ছড়ানো নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই ধরনের পোস্ট বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং জনমনে সন্দেহ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট ছড়ানো রোধে সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য যাচাই ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ডা. তাহেরের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে এবং তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলছেন। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তিনি দেশে ফিরবেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন।