close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ভারত মহাসাগরের ভূরাজনীতিতে পাকিস্তান কি পিছিয়ে থাকবে, নাকি নতুন সমীকরণ তৈরি করবে?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারত মহাসাগর কেবল একটি সমুদ্রপথ নয়, এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শক্তির ভারসাম্যের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। এই পথে বিশ্বের ৮০ শতাংশেরও বেশি তেল পরিবাহিত হয়, যা চীন ও ভ
ভারত মহাসাগর কেবল একটি সমুদ্রপথ নয়, এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শক্তির ভারসাম্যের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। এই পথে বিশ্বের ৮০ শতাংশেরও বেশি তেল পরিবাহিত হয়, যা চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে এই সমুদ্রপথ, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। পাকিস্তানের জন্য ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব পাকিস্তানের ১ হাজার ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে, যা হরমুজ প্রণালীর কাছাকাছি অবস্থিত। এই হরমুজ প্রণালী বিশ্ব জ্বালানি পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রুট, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ তেল পরিবাহিত হয়। এই অঞ্চলে পাকিস্তানের কৌশলগত উপস্থিতি দেশটির নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গদার বন্দর পাকিস্তানের জন্য আরও বড় সম্ভাবনা বয়ে এনেছে। এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পাকিস্তানকে মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করছে। চীনের জন্যও এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মালাক্কা প্রণালীর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে চীনকে সরাসরি আরব সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে। পাকিস্তানের নৌশক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাকিস্তান তার সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। যদিও ভারতীয় নৌবাহিনীর তুলনায় এটি তুলনামূলকভাবে ছোট, তবে এটি দেশের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। শক্তিশালী নৌবাহিনী কেবল উপকূল রক্ষার জন্য নয়, বরং সমুদ্রপথে বাণিজ্য ও জ্বালানি সরবরাহ নিরাপদ রাখার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান বর্তমানে উন্নত সাবমেরিন, ফ্রিগেট ও নৌ টহল বিমানের সংযোজন করেছে। নৌবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স কমান্ড (NSFC) গঠন করেছে এবং পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন যুক্ত করেছে। এর ফলে ভারত মহাসাগরে প্রতিরক্ষার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর আধিপত্য প্রতিহত করতে সাহায্য করবে। বিশ্ব রাজনীতিতে পাকিস্তানের অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ভারত মহাসাগরের ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চীনের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে, যার ফলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠছে। এটি পাকিস্তানের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, কারণ একদিকে চীনের সঙ্গে তার কৌশলগত সম্পর্ক, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভারত মহাসাগরের সামরিক কার্যক্রম বাড়ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন সক্রিয়ভাবে নৌবাহিনী মোতায়েন করছে। এর ফলে সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলদস্যুতা, সন্ত্রাসবাদ ও অবৈধভাবে মাছ ধরাও পাকিস্তানের সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। সুযোগ ও সম্ভাবনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি পাকিস্তানের জন্য সুযোগও রয়েছে। জলদস্যু দমনে অংশগ্রহণ, নৌ নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো এবং ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির সুযোগ কাজে লাগানো পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়াতে পারে। উপসংহার: পাকিস্তানের কৌশলগত ভবিষ্যৎ ভারত মহাসাগরের ভূরাজনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। কৌশলগত অবস্থান ও নৌ-শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে পাকিস্তান এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এজন্য তার সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। নৌ-শক্তি বৃদ্ধি, আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাকিস্তান তার স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারে। একইসঙ্গে এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে। গত এক দশকে সামুদ্রিক শক্তি বৈশ্বিক ক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সঠিক কৌশল গ্রহণ করতে পারলে পাকিস্তান ভারত মহাসাগরে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
Walang nakitang komento