রাজস্থান সীমান্তে নজিরবিহীন সতর্কতা, পাকিস্তানি সিম নিষিদ্ধ
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজস্থানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে জয়সলমির ও শ্রীগঙ্গানগর জেলাগুলোতে পাকিস্তানি মোবাইল সিম ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি পাকিস্তান সীমান্তে মোবাইল টাওয়ারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে ভারতের অভ্যন্তরে বসেও পাকিস্তানি মোবাইল সিগনাল ধরা পড়ছে। এতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী কেউ ইচ্ছা করে বা না জেনেই পাকিস্তানি সিম ব্যবহার করতে পারে, যার ফলে অবৈধ যোগাযোগ, তথ্য পাচার বা গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জমি নয়, এখন যুদ্ধে অস্ত্র সিম কার্ড!
জয়সলমিরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রতাপ সিংহ স্পষ্ট ভাষায় জানান, “সীমান্তবর্তী যেকোনো ব্যক্তি যদি পাকিস্তানি সিম ব্যবহার করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” একই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে শ্রীগঙ্গানগর জেলার প্রশাসনও।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে বহিরাগতদের চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তরক্ষা বাহিনী (BSF) এবং রাজ্য পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ টহল চলছে, এবং নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবস্থাও।
ড্রোন, সাইরেন ও সাইবার হামলার আশঙ্কা
BSF-এর ডেপুটি কমান্ডেন্ট মহেশ চন্দ্র জাত স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করেছেন ড্রোন বিষয়ে। তার বক্তব্য, “সীমান্তপারের দিক থেকে ড্রোনের মাধ্যমে গোয়েন্দা তৎপরতা বা বিস্ফোরক প্রেরণ বাড়তে পারে। তাই জনগণকে সচেতন থাকতে হবে।” তিনি আরও জানান, মানুষকে বুঝতে হবে—ড্রোন প্রযুক্তি কিভাবে শত্রুপক্ষের হাতিয়ার হতে পারে।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাজস্থানের জয়পুর, আলওয়ার, কোটা, আজমেরসহ একাধিক জেলাকে সেনসিটিভ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। সম্ভাব্য বিমান হামলার আশঙ্কায় এসব এলাকায় বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক সাইরেন, যেগুলো একটি কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে।
ইমেইল হুমকি ও সাইবার তদন্ত
বুধবার জয়পুরের স্বাই মানসিং স্টেডিয়াম, প্রতাপগড়ের মিনি সচিবালয় ও বারান জেলা প্রশাসন ভবনে বোমা হামলার হুমকি আসে। একই ইমেইলে জয়পুরের SMS হাসপাতালকেও লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। সাইবার বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় হুমকিদাতার পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।
সাধারণ জীবন আবারো স্বাভাবিক পথে
উত্তেজনা ও সতর্কতার মধ্যেও সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাধারণ জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। দোকানপাট, বাজার এবং স্কুলগুলো ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। বিমান চলাচলও পুনরায় চালু হয়েছে—জোধপুর, বিকানের এবং কিশনগড় বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ান চালু হয়েছে।
বেসরকারি এক বিমান সংস্থা ইতোমধ্যে কিশনগড় থেকে হায়দরাবাদ, পুনে, লখনউ, হিন্দন, নানদেদ ও বেঙ্গালুরু রুটে ফ্লাইট চালু করেছে। বিমানবন্দর পরিচালক বি এল মীনা জানান, “আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স বিকানের বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট চালাবে।”
শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন নির্দেশিকা
সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের কারণে বেশ কিছু স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। শিক্ষা বিভাগ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে নতুন পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে, যাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয়।
রাজস্থানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কড়া নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক তৎপরতা এখন চোখে পড়ার মতো। পাকিস্তানি সিম নিষিদ্ধকরণ থেকে শুরু করে ড্রোন হুমকি প্রতিরোধ, সাইবার সন্ত্রাস মোকাবিলা এবং জনসচেতনতা—সব কিছুই যেন অদৃশ্য এক যুদ্ধে ভারতের প্রস্তুতি। প্রশাসন বলছে, “সতর্ক থাকলেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।