close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বগুড়া” নয়, “বোগরা খান”: নাম পরিবর্তনের আড়ালে ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র..

Bokhtiar Shamim avatar   
Bokhtiar Shamim
বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক নাম “Bogra” এসেছে ১৩শ শতকের বাংলার গভর্নর সুলতান নাসিরউদ্দিন বুগরা খানের নাম থেকে। এই নামটি দীর্ঘদিন যাবৎ দলিল, ম্যাপ, প্রশাসনিক রেকর্ডসহ সকল ঐতিহাসিক উৎসে “Bogra” হিসেবেই ব্যবহৃত..

হেডলাইন: “বগুড়া” নয়, “বোগরা খান”: নাম পরিবর্তনের আড়ালে ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র

বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক নাম “Bogra” এসেছে ১৩শ শতকের বাংলার গভর্নর সুলতান নাসিরউদ্দিন বুগরা খানের নাম থেকে। এই নামটি দীর্ঘদিন যাবৎ দলিল, ম্যাপ, প্রশাসনিক রেকর্ডসহ সকল ঐতিহাসিক উৎসে “Bogra” হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার হঠাৎ করে “Bogra” থেকে “Bogura” নাম পরিবর্তন করে, যা স্থানীয় উচ্চারণ বা ভাষাগত সামঞ্জস্য বিবেচনায় নয়, বরং ইতিহাস মুছে ফেলার এক পরিকল্পিত রাজনৈতিক চেষ্টার অংশ। যেখানে বাংলাদেশের অন্য বিভাগের নাম পরিবর্তন কিছুটা যুক্তিসংগত হলেও, “Bogra” নামের পরিবর্তন বুগরা খানের ঐতিহাসিক স্মৃতি ও মুসলিম শাসনের নিদর্শনকে মুছে ফেলতে সচেতনভাবে করা হয়েছে—এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

---

Bogra: ইতিহাসের বিকৃতি, বুগরা খানের উপেক্ষা ও শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক আগ্রাসন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বগুড়া শুধু একটি জেলা নয়, বরং এটি একটি গৌরবময় উত্তরাধিকার। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধনের উত্তরসূরি এই অঞ্চল সুলতান নাসিরউদ্দিন বুগরা খানের নামে নামকরণ হয়েছিল, যিনি ১৩শ শতকের শেষভাগে বাংলার গভর্নর ছিলেন এবং স্বশাসনের পথে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ, এই নামটিই ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের হাতে। 

বগুড়ার ইংরেজি নাম “Bogra” যুগ যুগ ধরে দলিল, মানচিত্র, প্রশাসনিক কাগজপত্র, রেলওয়ে, ডাক বিভাগ, সরকারি ওয়েবসাইট, পাঠ্যবই এমনকি ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের গেজেট পর্যন্ত সমানভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। 

এই “Bogra” কোনো এলোমেলো বানান নয়; বরং এটি “Bogra Khan”—অর্থাৎ বুগরা খানের নামের একটি ঐতিহাসিক সংক্ষিপ্ত রূপ। এতে যেমন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এক মুসলিম শাসকের স্মৃতিচিহ্ন বহন করার মর্যাদা।

কিন্তু বর্তমান সরকার বিনা জনমত যাচাই, বিনা সংসদীয় বিতর্ক, বিনা ইতিহাসবিদদের পরামর্শে এক তরফাভাবে এই নাম পাল্টে “Bogura” করে ফেলে। এই একক সিদ্ধান্তটি কেবল বানান পরিবর্তন নয়; এটি ইতিহাসের শিরদাঁড়া ভাঙার নামান্তর। 

বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর যেমন Jessore → Jashore, Comilla → Cumilla, Barisal → Barishal, Chittagong → Chattogram প্রভৃতি ক্ষেত্রে বানান পরিবর্তন কিছুটা হলেও ধ্বনি-নির্ভর বা স্থানীয় উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। 

এই পরিবর্তনগুলো ভাষাবিজ্ঞান বা প্রমিতকরণ সংক্রান্ত ব্যাখ্যার মধ্যে ফেলা যায়। কিন্তু “Bogra” থেকে “Bogura”—এই রূপান্তরে কোনো ধ্বনিগত যৌক্তিকতা নেই, কোনো স্থানীয় উচ্চারণের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই। বরং এই পরিবর্তন ইতিহাসের মেরুদণ্ডে আঘাত।

আর এখানেই ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়—কারণ “Bogra” নামটি শুধু একটি ভূগোল নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রতীকও বটে। বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানকার জনগণের মধ্যে স্বাধীনচেতা মনোভাব ও ইতিহাস-সচেতনতা প্রবল। 

শেখ হাসিনার সরকার বহুদিন ধরেই এই জেলাকে ‘নির্জীব’ করে তোলার চেষ্টা করছে। বগুড়ার নাম মুছে ফেলে এক নতুন ছদ্মপরিচয় চাপিয়ে দেওয়া তারই অংশ—যাতে বগুড়াবাসী একদিন ভুলে যায় তারা কার উত্তরসূরি।

দিনের আলোয় দেখা যায়, বগুড়ার নাম পরিবর্তন ছিল এক গভীর রাজনীতিক ষড়যন্ত্র। কারণ এই পরিবর্তনের মাধ্যমে শুধু এক জেলার নাম নয়, এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকেই চিরতরে গোপন করার অপচেষ্টা হয়েছে। 

পাঠ্যবই থেকে বুগরা খানের নাম উধাও, নতুন মানচিত্রে “Bogra” আর নেই, সরকারি দপ্তরগুলো ধাপে ধাপে “Bogura” শব্দ চাপিয়ে দিচ্ছে নাগরিকদের উপর। যেন বুগরা খান কখনো ছিলেনই না।

শেখ হাসিনার সরকারের ইতিহাস-খেকো আচরণ কেবল এখানেই থেমে থাকেনি। একটি জাতিকে তার ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করা মানে তাকে তার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত করা। বগুড়ার এই রূপান্তর সেই বৃহত্তর চেষ্টারই অংশ—যেখানে ইতিহাসকে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছেমতো সাজিয়ে নেয়া হয়।

এখন প্রশ্ন একটাই—এই ইতিহাস বিকৃতি কি আমরা চুপচাপ মেনে নেব? বগুড়াবাসী কি তাদের পূর্বপুরুষের আত্মত্যাগ ও ঐতিহ্যকে ভুলে যাবে?

উত্তর একটাই হওয়া উচিত: না। কারণ একটি নাম কেবল শব্দ নয়, এটি পরিচয়, গৌরব ও ইতিহাসের ধারক। “Bogra” নামের প্রতিটি অক্ষর জড়িয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, স্বাধীনতার ইঙ্গিত, বুগরা খানের সাহসিকতা ও প্রাচীন সভ্যতার শেকড়ের সাথে।

তাই আজকের দিনে আমাদের কর্তব্য—বগুড়ার প্রকৃত ইতিহাস উদ্ধার করা, তার দলিল, কাগজপত্র, নামফলক, মানচিত্রে ‘BOGRA’ ফিরিয়ে আনা। কারণ ইতিহাস বিকৃতি কোনো ছোট অপরাধ নয়; এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা এক নীরব যুদ্ধ।

 

Aucun commentaire trouvé