তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার নামে হয়রানি, অনৈতিক প্রস্তাব এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মামলার স্বাভাবিক গতিপথ প্রভাবিত করার অভিযোগে তারা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য।
এক ভুক্তভোগী তার লিখিত অভিযোগে জানান, তিনি বগুড়া সদর উপজেলার মালগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মামলাটি এফআইআর হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা বছরের পর বছর থানায় ঝুলে থাকে।
মামলার অগ্রগতি জানতে থানায় যোগাযোগ করলে তাকে অবমাননাকর ও হতাশাজনক আচরণের মুখোমুখি হতে হয়। একপর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ফোন করে দেখা করতে বলেন।
ভুক্তভোগী ঢাকায় পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকায় দেখা করতে না পারলে, ডিএনএ পরীক্ষার অজুহাতে পূর্বের পরীক্ষার ফল গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ওই সময় তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং চাপ সৃষ্টি করা হয়। ভুক্তভোগী জানান, এ সংক্রান্ত কথোপকথনের অডিও রেকর্ড তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
অপর ভুক্তভোগী নারী বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। তার অভিযোগ, প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মোস্তাফিজুর রহমান সানী নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তাকে অপহরণ ও ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী জানান, এসব ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় অভিযোগ দিলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই মোস্তাফিজুর রহমানকেই। কিন্তু তদন্তের নামে তিনি নিজেই অনৈতিক প্রস্তাব দেন এবং নানা প্রলোভন দেখান।
এতে রাজি না হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে উল্টো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করানো হয়। পরে সেই জিডি আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠানো হয়।
দুই নারীই অভিযোগ করেছেন, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান আর্থিক সুবিধা নিয়ে অভিযুক্তদের পক্ষাবলম্বন করেছেন এবং পরিকল্পিতভাবে মামলার গতিপথ বাধাগ্রস্ত করেছেন। এতে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক চাপে দিন কাটাচ্ছেন।
এই অবস্থায় তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত, বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আইজিপি ও বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তারপরও যদি অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুল হয়ে থাকে, সে জন্য আমি দুঃখিত।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন বলেন, অভিযুক্ত এসআই মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই দিন আগেই বগুড়া সদর থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনায় পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে কী উঠে আসে এবং অভিযোগের শেষ পরিণতি কী হয় সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছে সচেতন মহল।



















