বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। সরকারি চাকরি আইনে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বদলির নির্দেশ অমান্য করে আদেশ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় সংস্থাটির ১৪ জন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন কর বিভাগের পাঁচজন যুগ্ম কর কমিশনার, তিনজন উপ-কর কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, দ্বিতীয় সচিব ও রাজস্ব কর্মকর্তা। বদলির সরকারি আদেশ অমান্য করাকে 'ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ' আখ্যা দিয়ে সরকার এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে পৃথকভাবে ১৪টি প্রজ্ঞাপন জারি করে এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রত্যেক প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন বিভাগটির সচিব মো. আব্দুর রহমান খান এফসিএমএ।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী এ আদেশ জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনগুলোতে বলা হয়, বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরকারি বিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং একইসঙ্গে অন্যদেরও আইন অমান্যে উৎসাহ দিয়েছেন। ফলে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার পাশাপাশি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তারা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের তালিকায় যাঁরা আছেন:
১. মাসুমা খাতুন – যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-২
২. মুরাদ আহমদ – যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-১৫
৩. মো. মোরশেদ উদ্দিন – যুগ্ম কর কমিশনার, কুষ্টিয়া কর অঞ্চল
৪. মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা – যুগ্ম কর কমিশনার, নোয়াখালী কর অঞ্চল
৫. আশরাফুল আলম প্রধান – যুগ্ম কর কমিশনার, কক্সবাজার
৬. শিহাবুল ইসলাম – উপ-কর কমিশনার
৭. নুশরাত জাহান শমী – উপ-কর কমিশনার, রংপুর
৮. ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল – উপ-কর কমিশনার, কুমিল্লা
৯. মির্জা আশিক রানা – অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর অঞ্চল-৮
১০. মো. শাহাদাত জামিল – দ্বিতীয় সচিব, এনবিআর
১১. হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার – অতিরিক্ত কমিশনার, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ
১২. সিফাত-ই-মরিয়ম – উপ-প্রকল্প পরিচালক, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প
১৩. শফিউল বশর – রাজস্ব কর্মকর্তা, খুলনা কাস্টমস
১৪. সবুজ মিয়া – রাজস্ব কর্মকর্তা, ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস বন্ড
গত ২২ জুন এনবিআরের পক্ষ থেকে একাধিক কর্মকর্তার বদলির আদেশ জারি করা হয় এবং ২৪ জুনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। তবে আদেশের প্রতিবাদে ২৪ জুন এনবিআর ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বদলি আদেশ ছিঁড়ে ফেলেন একদল কর্মকর্তা। এর ফলে কাস্টমসের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয় এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে।
পরবর্তীতে সরকার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু এরপর এনবিআরের তিনজন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
সরকারি প্রশাসনে এমন প্রকাশ্য অবাধ্যতার নজির খুবই বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতা রক্ষা করতেই দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।