বদির সঙ্গে বিরোধে ক্রসফায়ারে খুন কাউন্সিলর একরাম

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
রাজনৈতিক বিরোধ ও জনপ্রিয়তা
ক্রসফায়ারের চাঞ্চল্যকর অডিও
পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ
মাদকের অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রভাব
হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতি
প্রশাসনের বক্তব্য
পরিবারের দাবি ও বর্তমান অবস্থান
..

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা একরামুল হককে ২০১৮ সালে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাদক ব্যবসার অভিযোগ সামনে এনে একরামকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হলেও এর মূল কারণ ছিল স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ।

একরামুল হক টানা ১৩ বছর টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুমুল। সেই জনপ্রিয়তাকেই হুমকি হিসেবে দেখেন তৎকালীন সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি—এমন অভিযোগ করেছেন একরামের পরিবারের সদস্যরা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বদির সঙ্গে বিরোধের জেরেই একরামকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

একরাম হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর সন্তানের ফোনে রেকর্ড হওয়া অডিও দেশ–বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। অডিওতে শোনা যায় একরামের আর্তচিৎকার, গুলির শব্দ এবং তাঁর সন্তানের কান্না। এর পর থেকেই ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে সরকারি ভাষ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

পরিবারের দাবি, ঘটনাটি কোনো আকস্মিক ‘ক্রসফায়ার’ ছিল না, বরং ডিজিএফআই, এনএসআই ও র‍্যাবের কয়েকজন সদস্য মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। একরামের স্ত্রী আয়শা বেগম জানান, মৃত্যুর কিছুদিন আগ থেকে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার নাজমুস সাকিব ও র‌্যাবের তৎকালীন কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন একরামের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

ঘটনার দিন, ২০১৮ সালের ২৬ মে, একরামকে একাধিকবার ফোন করে দেখা করতে চাপ দেওয়া হয় বলে জানান তাঁর পরিবার। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। এরপর ফোনে একরামের কান্নার শব্দ শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ ও আর্তনাদ শুনতে পান তাঁরা।

একরামের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, একরাম বরাবরই মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। অথচ তাঁকেই ‘মাদক সম্রাট’ আখ্যা দিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, তৎকালীন সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি নিজেই মাদক-ব্যবসার কারণে ব্যাপক সমালোচিত ছিলেন। বদির পেছনে ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতার মদদ ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।

একরামের স্ত্রী আয়শা বেগম জানান, হত্যাকাণ্ডের পর তাঁদের পুরো পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আতঙ্কে রাখা হয়। কাফনের কাপড় পাঠানো থেকে শুরু করে দুই মেয়ের ক্ষতি করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। র‌্যাব ও পুলিশের হুমকির কারণে আইনজীবীরাও তাঁদের পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হননি বলে জানান তিনি।

ঘটনার সময় টেকনাফের তৎকালীন ইউএনও রবিউল হাসান বলেন, তিনি কোনো ক্রসফায়ারের সময় উপস্থিত ছিলেন না এবং এ বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতেন না। আর র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

একরামের পরিবার এখনো ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, ফ্যাসিস্ট কায়দায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলেই তাঁরা বিচার পাননি। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি করছেন তাঁরা।

যুবলীগ নেতা একরামুল হকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে নির্বিচার হত্যার অভিযোগে র‌্যাবের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে। একরামের পরিবার বলছে, ক্রসফায়ারের নামে এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। এ নিয়ে পুনঃতদন্ত ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

Комментариев нет