close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশির ম র দে হে র সঙ্গে সৌদি মালিকের অমা নবিক আচরণ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু, এরপর সৌদি মালিকের হুমকি—‘মরদেহ দাফন না করলে ক্ষতিপূরণ নয়’। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন ফাঁস করল সৌদিতে বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয় শ্রমিকদের ভয়াবহ বাস্তবতা।..

সৌদি আরবে শ্রমিকের মরদেহ আটকে রেখে ক্ষতিপূরণের শর্ত—এই অমানবিক আচরণ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফেয়ার স্কয়ারের যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যেখানে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের ও নেপালের শ্রমিকরাও দিনের পর দিন প্রাণ হারাচ্ছেন মালিকদের অবহেলায় এবং ন্যূনতম নিরাপত্তার অভাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদিতে বিভিন্ন শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় সরাসরি মালিকপক্ষের দায়িত্বহীনতা রয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, ভবন থেকে পড়ে যাওয়া, কিংবা নির্মাণকাজের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ঘটনা ব্যাপকহারে ঘটছে। অথচ এই মৃত্যুগুলোর বেশিরভাগই ছিল এড়ানো সম্ভব, যদি শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হতো।

বাংলাদেশি এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ওই শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। কিন্তু তার মরদেহ সৌদি মালিক আটকে রাখেন, শর্ত দেন—শুধুমাত্র মরদেহ নিজ দেশে দাফনের পরই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এমন আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলেই উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই ধরনের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করতে দেওয়া হয় না। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ চেপে ফেলে মালিক পক্ষ, এবং সরকার পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হয় না। ফলাফল—পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ তো পায়ই না, বরং প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত জানতে পারে না।

একটি পরিবারের বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সৌদি সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে তাদের পুরো ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে পরিবারটি সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

ফিফা বিশ্বকাপ ও সৌদি ভিশন ২০৩০: ভবিষ্যতের শঙ্কা
সৌদি আরব ২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর জন্য দেশজুড়ে স্টেডিয়াম ও অবকাঠামো নির্মাণ চলছে জোরেশোরে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ফেয়ার স্কয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া হাজার হাজার বাংলাদেশি, ভারতীয় ও নেপালি শ্রমিক আরও বড় বিপদের মুখে পড়তে চলেছেন।

সৌদির সরকার এখনো পর্যন্ত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, জীবনবিমা, কিংবা মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কাতার যখন ২০২২ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে, তখন তারা একটি সুপ্রিম কমিটি গঠন করে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিল, জীবনবীমা চালু করেছিল, গরম থেকে বাঁচাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেছিল। কিন্তু সৌদি আরব এখনও পর্যন্ত এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও আহ্বান
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ পরিচালক মিনকি ওর্ডেন বলেছেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ফিফা এবং সৌদি সরকারের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। মরদেহ আটকে রাখা, ক্ষতিপূরণের শর্ত চাপানো—এসব আচরণ মানবতা ও আইনের পরিপন্থী।”

তিনি আরও বলেন, “যদি সৌদি সরকার বিশ্বকাপের আয়োজন করতে চায়, তবে তাদের উচিত প্রথমেই শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।

 

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার গরিব শ্রমিকরা স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দেন সৌদির মতো ধনী দেশে। কিন্তু সেখানকার বাস্তবতা অনেক সময় মৃত্যুর চেয়েও নির্মম। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা এবং নিজ নিজ দেশের সরকারের এসব মৃত্যুকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার, এবং বাস্তব ব্যবস্থা নেওয়ার। শ্রমিকেরা মানুষ—তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা সভ্যতার প্রশ্ন।

Hiçbir yorum bulunamadı


News Card Generator