বাংলাদেশি আমের ঐতিহাসিক যাত্রা: চীনের বাজারে প্রথমবারের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ আম রপ্তানি!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা—প্রথমবারের মতো চীনে পাঠানো হলো দেশি আম। বাণিজ্যিক এই সাফল্য কেবলই শুরু; লক্ষ্যমাত্রা ১০০ টনের বেশি রপ্তানি! কীভাবে সম্ভব হলো এই অর্জন? জেনে ..

বাংলাদেশের কৃষিখাতে যুক্ত হলো এক ঐতিহাসিক সাফল্য। প্রথমবারের মতো চীনের বাজারে রপ্তানি হলো বাংলাদেশের সুস্বাদু আম। এই ঐতিহাসিক রপ্তানিকে ঘিরে ২৮ মে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ আনুষ্ঠানিকতার। এদিন বিমানে করে বাংলাদেশি আম পাঠানো হয় চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাং শার হুয়াং হুয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এখন পর্যন্ত চীন কখনো বাংলাদেশের আম আমদানি করেনি। তাই এই রপ্তানি শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিক ও কৃষি খাতের সম্ভাবনার দিক থেকেও বিশাল এক মাইলফলক।

কঠোর কোয়ালিটি চেক পেরিয়ে ছাড়পত্র

চীনে পৌঁছানোর পরপরই আমগুলোকে চীনের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কড়া যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিটি আমের চেহারা, রঙ, আকার, প্যাকেজিং, এবং উৎপাদন ও প্যাকিংয়ের প্রামাণ্য কাগজপত্র যাচাই করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। চীনের উদ্ভিদ কোয়ারেন্টিন ও স্যানিটারি সার্টিফিকেশন সিস্টেমে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই মিলেছে ছাড়পত্র।

এই পণ্যগুলো এখন চীনের বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, সুপারশপ এবং তাজা খাদ্য বিক্রয় চেইনে বিক্রি করা হবে।

৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের সম্মানে বড় উদ্যোগ

বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই রপ্তানিকে ঘিরে রয়েছে বাড়তি গুরুত্ব। প্রথম ধাপে পরিকল্পনা রয়েছে ১০০ টনেরও বেশি আম চীনে রপ্তানির। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যদি প্রথম চালানের আমগুলো চীনা ভোক্তাদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলে, তবে ভবিষ্যতে এই রপ্তানির পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

নতুন বাজার, নতুন সম্ভাবনা

এর আগে বাংলাদেশের আম প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হতো। তবে এবার চীনের মতো বৃহৎ ও সম্ভাবনাময় এশীয় বাজারে প্রবেশ করায় কৃষিপণ্য রপ্তানির নতুন দরজা খুলে গেল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আমের স্বাদ ও গুণগত মান আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক। সঠিকভাবে মান বজায় রাখা গেলে শুধু চীন নয়, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বাজারেও এই ফল পৌঁছানো সম্ভব।

রপ্তানিকারক ও কৃষকদের আশাবাদ

এই রপ্তানির সাথে যুক্ত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, এটি একটি "গেম চেঞ্জার" মুহূর্ত। চীনা ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে, এটি দেশের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক পথ খুলে দেবে। অন্যদিকে কৃষকরাও আরও মানসম্মত উৎপাদনের দিকে ঝুঁকবেন, কারণ দাম ও বাজার নিশ্চিত থাকলে উৎপাদনের মানোন্নয়ন সহজ হয়।

বাংলাদেশের আম এখন আর কেবল ঘরোয়া স্বাদে সীমাবদ্ধ নয়—এটি এখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হতে চলেছে। চীনের বাজারে সফল প্রবেশ কেবল শুরু, এর মাধ্যমে দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আসবে নতুন গতি ও আস্থা। এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ প্রমাণ করে, বিশ্ববাজারে জায়গা করে নেওয়ার মতো সামর্থ্য বাংলাদেশের কৃষিতে রয়েছে, প্রয়োজন শুধু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।

Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator