close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশের নাম পাল্টে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট’ করার প্রস্তাব! ইসলামী আন্দোলনের বিস্ফোরক সুপারিশে আলোড়ন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অফ বাংলাদেশ’ করার প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই প্রস্তাবের সঙ্গে শরিয়াহ আইন চালু ও রাষ্ট্রপতির সরাসরি নির্বাচ..

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের দাবিতে উত্তাল রাজনৈতিক অঙ্গন—"গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" নয়, এবার "পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অফ বাংলাদেশ"! এই প্রস্তাব এসেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে, যা ঘিরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক ও জোরালো আলোচনা।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধি দল। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে জমা দেওয়া এই সুপারিশে কেবল নাম পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং আরো বহু গঠনমূলক ও বিতর্কিত প্রস্তাব রয়েছে যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও আহমদ আবদুল কাইয়ুম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও।

ইসলামী আন্দোলন জানিয়েছে, কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে তারা ১৩০টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ১১টি প্রস্তাবে আংশিক সমর্থন জানিয়েছে। তদুপরি, তারা ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাবও যুক্ত করেছে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন জানান, এই চারটি মৌলিক প্রস্তাবের মূল ভিত্তি হচ্ছে আত্মশুদ্ধি ও জবাবদিহিতা। তার ভাষায়, “জাতীয়ভাবে আত্মশুদ্ধি না ঘটলে সৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষ তৈরি হবে না।” এই আত্মশুদ্ধির জন্য জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে চারটি স্তরে—আল্লাহ, বিবেক, জনগণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান আইন দিয়ে দুর্নীতি, ধর্ষণ, দুঃশাসনের মতো অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর কার্যকর সমাধান হিসেবে তিনি শরিয়াহ আইনের বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তার ভাষায়, “শরিয়াহ আইন সর্বজনীন, এতে সব ধর্মের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই আইন দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন—দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর।”

আলোচনার সময় আশরাফ আলী আকন দাবি করেন, বিএনপিও তাদের শরিয়াহ আইন প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে এবং জানিয়েছে, তারা শরিয়াহ-বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করবে না।

এছাড়া দলটি সংখ্যানুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচন ব্যবস্থার দাবিও জানিয়েছে। এসবের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধের পথ তৈরি হবে বলে তাদের বিশ্বাস।

তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে দেশের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব। আকন বলেন, “বাংলাদেশ হবে একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আমরা এমন একটি নাম প্রস্তাব করেছি, যা শুনে মানুষের মনে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে—‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অফ বাংলাদেশ’।”

এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “স্বাধীনতার পরে সব দলের অংশগ্রহণে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা চাই, এই প্রক্রিয়া থেকে একটি জাতীয় সনদ তৈরি হোক। সবাই সব প্রস্তাবে একমত হবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে মতপার্থক্যগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।”

তিনি আরও জানান, আগামী ১২ এপ্রিল থেকে প্রতিদিনই একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ চলবে এবং মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করতে চায় কমিশন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবারও বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে।

কমিশনের লক্ষ্য— ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ ঐকমত্য ভিত্তিক রাষ্ট্র সংস্কার রিপোর্ট চূড়ান্ত করা। এজন্য ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে প্রস্তাবগুলো স্প্রেডশিট আকারে পাঠানো হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই ৩২টি দল মতামত প্রদান করেছে।

তালিকাভুক্ত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে রয়েছে—সংবিধান সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর নির্দিষ্ট ও গঠনমূলক মতামত প্রত্যাশা করছে কমিশন।

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের মতো একটি সংবেদনশীল প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত বা বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে উত্তপ্ত বিতর্ক। তবে এটুকু স্পষ্ট—রাষ্ট্রীয় সংস্কারের নতুন প্রক্রিয়ায় ইসলামী আন্দোলন নিজের অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

Ingen kommentarer fundet