বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুকে ঘিরে প্রায় তিন দশক ধরে চলছে বিতর্ক। কেউ বলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন, কেউ বলেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিষয়টি, তাঁর সাবেক স্ত্রী সামিরা হকের সাম্প্রতিক মন্তব্যে।
‘সালমান মানসিকভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ ছিলেন’
২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিরা হক দাবি করেন, সালমান মানসিকভাবে ছিলেন “সুইসাইডাল বাই নেচার” — অর্থাৎ আত্মহত্যাপ্রবণ। তাঁর কথায়,
“ইমন (সালমান) আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। মেট্রোপলিটন হাসপাতালে দু’বারের রেকর্ড আছে, আরেকটা অন্য হাসপাতালে। তিনটাই আমাদের বিয়ের আগের ঘটনা।”
তিনি আরও জানান, এসব ঘটনার একটি ঘটেছিল সালমানের মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে ঝগড়ার পর, আরেকটি সামিরাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য, এবং তৃতীয়বার অন্য একটি ব্যক্তিগত ঘটনায়।
‘ইমন কিন্তু নায়কা হতে চায়নি’
সালমান শাহ কেন এমন মানসিক অবস্থায় ছিলেন, তা নিয়েও মত দেন সামিরা।
“ইমন কিন্তু সিনেমায় আসতে চায়নি, পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। ছোটবেলায় কিছু কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, যা ওকে মানসিকভাবে খুব প্রভাবিত করেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “তখন তো কাউন্সেলিং বা মানসিক সহায়তা বলেই কিছু ছিল না। এখন হলে হয়তো কাউকে বলত, সাহায্য নিত। কিন্তু তখন ‘সালমান শাহ’ হয়ে যাওয়ার পর আর কাউকে কিছু বলতে পারত না — বললেই সেটা নিউজ হয়ে যেত।”
বিরোধী অবস্থানে সালমানের মা
অন্যদিকে, সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বরাবরই দাবি করে আসছেন, তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাদের তদন্তে জানিয়েছিল—সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন, এবং এর পেছনে পাঁচটি কারণও উল্লেখ করেছিল।
অমীমাংসিত রহস্যের ২৯ বছর পর আবার আলোচনায়
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থানা–পুলিশ, সিআইডি, র্যাব ও পিবিআই—সবাই তদন্ত চালায়। কিন্তু প্রতিটি সংস্থা ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বললেও সালমানের পরিবার তা মেনে নেয়নি।
সম্প্রতি আদালত সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর দায়ের করা রিভিশন আবেদনের পর নতুন করে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে রমনা থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অল্প সময়ে কিংবদন্তি হয়ে ওঠা নায়ক
মাত্র ২৫ বছরের জীবনে সালমান শাহ ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যেগুলোর প্রায় সবই বাণিজ্যিকভাবে সফল। নব্বইয়ের দশকে তাঁর হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রে ‘রোমান্টিক হিরো’ ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’— প্রতিটি সিনেমাই বক্স অফিসে হিট হয়েছিল।
তিন দশক পরও সালমান শাহ রয়ে গেছেন সেই ২৪ বছরের আকর্ষণীয় তরুণের মতোই, অমীমাংসিত রহস্যের ছায়ায় মোড়া এক কিংবদন্তি হয়ে।



















