সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে এবারের মহাষ্টমী স্নানোৎসব ছিল নজিরবিহীন। শুক্রবার রাত ২টা ৭ মিনিটে শুরু হয়ে শনিবার রাত ১২টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত চলে এ উৎসব। ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, আমার পাপ হরণ কর’—এই মন্ত্রোচ্চারণে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করেন দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক পূণ্যার্থী।
স্নানের সময় ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আমপাতা ইত্যাদি দিয়ে পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন পূণ্যার্থীরা। রাজঘাট, গান্ধীঘাটসহ ২০টি স্নানঘাটে উপচে পড়া ভিড় ছিল। বিশেষ করে শনিবার সকাল থেকেই ভক্তদের চাপ তিন কিলোমিটার জুড়ে ছিল চোখে পড়ার মতো।
২০১৫ সালের দুর্ঘটনার স্মৃতি থাকলেও এবার সরকারি উদ্যোগে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে উৎসব ছিল নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করেন এ তীর্থস্নানে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় স্নানোৎসব পরিদর্শনে এসে বলেন, "বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে, তা বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সবাই এখানে একসঙ্গে আছে, কাজ করছে।"
তিনি আরও বলেন, "স্নানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের পর তা যেন জীবনে বজায় থাকে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এবার গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি পূণ্যার্থী এসেছেন, সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে হবে।"
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। উৎসবের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
স্নানোৎসবের নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি আওলাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলমগীর হোসেন এবং বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সেবামূলক কার্যক্রম ও খাবার বিতরণে অংশগ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যসেবায় ছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক মেডিকেল টিম।
লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা শিখন সরকার শিপন বলেন, “চৈত্র মাসের শুক্লা তিথিতে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয় এবং ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়।” এ উৎসব কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে এবার।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			