close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশে রাজনীতি: আদর্শ বনাম পেশাদারিত্বের দ্বন্দ্ব

Alamin hosen suvo avatar   
Alamin hosen suvo
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শনিষ্ঠ কর্মী ও পেশাদার রাজনীতিবিদদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।..

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে—রাজনীতি আসলে কার জন্য? যেখানে একজন দিনমজুর, রিকশাচালক কিংবা কৃষক তার দৈনন্দিন শ্রমের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য সময় দেন, সেখানে কিছু ব্যক্তি রাজনীতিকেই তাদের একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাদের চোখে রাজনীতি শুধুমাত্র ক্ষমতার সিঁড়ি।  

 

রাজনীতিতে দুই ধরনের কর্মীর চিত্র পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত, আদর্শনিষ্ঠ কর্মীরা মূলত পেশাগতভাবে অন্য কাজ করেন। তারা দিনমজুর, দোকানি, শিক্ষক, ছাত্র বা গৃহিণী হতে পারেন। দলের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন, পোস্টার লাগান এবং মিছিল করেন। বিনিময়ে কোনো আর্থিক সুবিধা না পেলেও ত্যাগের মনোভাব থেকেই তারা রাজনীতি করেন। দ্বিতীয়ত, পেশাদার রাজনীতিবিদরা চাকরি বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তারা স্থানীয়ভাবে 'নেতা' হিসেবে পরিচিত এবং রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 

 

প্রশ্ন উঠছে, তাদের আয়ের উৎস কী? যারা কোনো চাকরি করেন না বা ব্যবসা নেই, অথচ ভালোভাবে চলাফেরা করেন, পরিবার চালান এবং বিলাসী জীবনযাপন করেন—তাদের অর্থ কোথা থেকে আসে? স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নেতার আয়ের উৎস অজানা। কেউ বলে তারা দলের নাম করে চাঁদা তোলে। কেউ সরকারি অনুদান বা প্রকল্প থেকে সুবিধা নেয়। কেউ আবার প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল বা তদবির ব্যবসায় জড়িত। এছাড়াও রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে টেন্ডার, উন্নয়ন প্রকল্প বা স্থানীয় দখলদারিত্বে জড়িত থাকতে পারে। 

 

এই পেশাদার রাজনৈতিক নেতারা সমাজে এক ধরনের অনানুষ্ঠানিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশাসনে তদবিরে সুবিধা পান। সাধারণ মানুষ তাদের দ্বারস্থ হয় সমস্যা সমাধানের আশায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কখনো কখনো বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই ধরনের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা সমাজে দুর্নীতি, বৈষম্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়িয়ে তোলে। রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য কি এই ছিল? 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "রাজনীতি যদি পেশা হয়, তবে তার দায়বদ্ধতাও থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতি পেশা হলেও এর জবাবদিহি নেই। ফলে রাজনৈতিক নৈতিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।" 

 

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—যেখানে একজন গরীব মানুষ রাজনৈতিক মিছিল করার সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়, সেখানে 'নেতা'রা এসি কক্ষে বসে রাজনীতি করেন। ত্যাগ ও সেবার মূলমন্ত্র হারিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব হয়ে উঠেছে শুধুই সুবিধাভোগী শ্রেণির হাতে। 

 

উপসংহার হিসেবে বলা যায়, রাজনীতি কার জন্য? যারা ভালোবাসা থেকে করে, না যারা জীবিকা হিসেবে নেয়? এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়। কিন্তু এ বিষয়ে জাতীয়ভাবে আলোচনার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পাওয়াই স্বাভাবিক।

Inga kommentarer hittades