close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশে ঢুকে ছয় গরু নিয়ে গেল বিএসএফ, হাত-পা বাঁধা মানসিক রোগীকে রেখে গেল সীমান্তে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে আবারো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর আগ্রাসী আচরণ। একদিকে ছয়টি গরু নিয়ে গেল, অন্যদিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে গেল এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে। গ্রামবাসী..

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আবারও চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার রহমানপুর সীমান্তে সোমবার (২৬ মে) দুপুরে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা একদিকে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে ছয়টি গরু নিয়ে যায়, অন্যদিকে হাত-পা বাঁধা এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে সীমান্তে ফেলে রেখে যায়।

ঘটনার সূত্রপাত হয় দুপুরে, পাটগ্রামের রহমানপুর এলাকার ৮১৮ নম্বর মেইন পিলারের নিকটবর্তী জীমনাল সীমান্তে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএসএফ সদস্যরা এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ‘পুশইন’ প্রচেষ্টার সময় সীমান্তে দায়িত্বরত বাংলাদেশি গ্রামবাসীরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রামবাসীদের সাহসী প্রতিরোধ:

গ্রামবাসীরা জানান, বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে আগ্রাসী ভঙ্গিতে পুশইন করতে চাইলে স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হাতে লাঠি নিয়ে তারা বিএসএফ সদস্যদের দিকে এগিয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে বাধ্য হয়ে বিএসএফ সদস্যরা পিছু হটে। তবে যাওয়ার আগে ওই মানসিক যুবককে হাত ও পা বেঁধে সীমান্তের শূন্যরেখায় ফেলে রেখে যায়।

গরু নিয়ে যাওয়ার ঘটনা:

ঘটনার কিছুক্ষণ পরই একই সীমান্ত এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। স্থানীয় কৃষক তুহিন ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, “আমার ছয়টি গরু বাংলাদেশের অংশে ঘাস খাওয়ানোর জন্য বাঁধা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএসএফ সদস্যরা গরুগুলো ধরে নিয়ে যায় ভারতের অভ্যন্তরে।” ঘটনাটি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় বিজিবিকে অবহিত করা হয়।

বিজিবি ও পুলিশের বক্তব্য:

বিষয়টি নিয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, “বিএসএফ এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তার হাত-পা বেঁধে সীমান্তে ফেলে রেখে যায়। এ সময় তারা বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে ছয়টি গরুও ধরে নিয়ে যায়।” ঘটনার পর সীমান্তজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তবে এই বিষয়ে তিস্তা ৬১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুসাহিদ মাসুমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

গ্রামবাসীদের নজরদারি:

ঘটনার পর স্থানীয় গ্রামবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সীমান্তে পালাক্রমে পাহারা বসিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, “বিএসএফ যাতে আবার এভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাউকে ঢুকিয়ে না দেয় বা গরু নিয়ে যেতে না পারে, সেইজন্য আমরা সজাগ রয়েছি।”

উত্তেজনার প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক প্রশ্ন:

এই ধরনের ঘটনাগুলো শুধু স্থানীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে বিএসএফের এমন কর্মকাণ্ড দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কে বাধা সৃষ্টি করছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

 

একের পর এক এ ধরনের আগ্রাসী আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশের জনগণ ও প্রশাসন এর কঠোর প্রতিবাদ জানালেও কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আপাতত রহমানপুর সীমান্তে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

No comments found


News Card Generator