বাংলাদেশে চারটি প্রদেশ গঠনের ভাবনা: বিকেন্দ্রীকরণের পথে নতুন পরিকল্পনা!

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চারটি প্রদেশ গঠনের সুপারিশের কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমান চারটি বিভাগ—ঢাকা, চট্
বাংলাদেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চারটি প্রদেশ গঠনের সুপারিশের কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমান চারটি বিভাগ—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনাকে প্রদেশে রূপান্তর করার চিন্তা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্যান্য দায়িত্ব প্রদেশের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধিরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। যদিও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি, তবু কমিশনের প্রধান ও সদস্যরা কিছু সম্ভাব্য সুপারিশ তুলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে প্রদেশ গঠন কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। তবে, এ প্রদেশগুলোর কাঠামো কেমন হবে বা সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব অবশ্য নতুন নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এর আগে পাঁচটি প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, এত বড় জনসংখ্যার দেশে সরকারকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ফেডারেল কাঠামো অত্যন্ত কার্যকর হবে। সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া তবে প্রদেশ গঠনের এই চিন্তাকে সমর্থন করেন না অনেক স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের মতে, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ছোট একটি দেশ। ভালো স্থানীয় সরকার গঠন করলে প্রদেশের প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং প্রদেশ গঠনের ফলে নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে আটটি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ। এ ছাড়া কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগে উন্নীত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে প্রদেশ গঠন করলে এই কাঠামো কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। অন্যান্য সুপারিশ কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশে আরও রয়েছে: উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা নির্ধারণ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে রেখে আলাদা কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা। নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা বাদ দেওয়া। প্রতিটি জেলায় তথ্য অধিকার আইনের আওতায় একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া। তবে এসব সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কোটা বিষয়ক প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন, অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও আলাদা কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সুপারিশে কী থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। এ বিষয়ে কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন। বাংলাদেশে প্রদেশ গঠনের এই চিন্তা কি বাস্তবায়ন হবে? নাকি নতুন বিতর্ক তৈরি করবে? বিষয়টি এখন দেখার অপেক্ষা।
Aucun commentaire trouvé