close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশ পুলি'শকে ‘পাকিস্তানি সে'না’ বলে গুজব ছড়ালো ভারতীয় মিডিয়া..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম আজতক বাংলা দাবি করেছে, ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা যাওয়া ব্যক্তিরা নাকি পাকিস্তানি সেনা! অথচ ছবির সত্যতা অনুসন্ধানে জানা গেল, তারা সবাই বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা—পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এ..

ভারতীয় গণমাধ্যমে গুজব, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠল সোশ্যাল মিডিয়া

বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের ছবি ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। গতকাল শনিবার (৩ মে) ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা গণমাধ্যম আজতক বাংলা তাদের একটি ভিডিও রিপোর্টে দাবি করে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে হ্যান্ডশেকরত ব্যক্তিরা নাকি "পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা"। তাদের কথায়, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোশাক এমন নয়, তাহলে এরা কারা? পাকিস্তানি সেনা কি বাংলাদেশে?"

এই তথ্য প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হয় বিস্ময়, ক্ষোভ এবং জবাব চাওয়ার জোয়ার। তবে দ্রুতই রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান এই দাবি পুরোপুরি মিথ্যা এবং গুজব বলে প্রমাণ করে।

ছবির প্রকৃত তথ্য কী?

আজতক যেই ছবিকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে, সেটি আসলে গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ছবি। ছবিতে যেসব ব্যক্তিকে পাকিস্তানি সেনা বলা হয়েছে, তারা আসলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সিনিয়র কর্মকর্তা

ছবিটি প্রথম প্রকাশ পায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে। ক্যাপশনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল, অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ, পিপিএম, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) গ্রহণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের হাত থেকে।

আরও প্রমাণ পুলিশের নিজস্ব মাধ্যমে

শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নয়, বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও ওইদিন একাধিক ছবি প্রকাশ পায়, যেখানে একই ধরনের পোশাক পরিহিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখা যায়। এমনকি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকেও ঐ একই পোশাকে ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে।

এই পোশাককে ঘিরেই আজতক বাংলা ‘সেনা পোশাক’ বলে ভুলভাল দাবি করে, যা একেবারে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

পুলিশের পরিষ্কার বক্তব্য

এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর। তিনি বলেন:

 

ছবিতে দেখা ব্যক্তিরা সকলেই বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য। এটি আমাদের সামার টিউনিক নামক ceremonial dress, যা আমরা পুলিশ সপ্তাহের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিধান করি। আজতক যে পাকিস্তানি সেনার দাবি করেছে, সেটি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং গুজব।”

গুজব ছড়ানো কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

বিশ্লেষকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে এমন স্পষ্ট বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার কি নিছক ভুল, না কি এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? বাংলাদেশের মতো একটি প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নিয়ে এমন স্পর্শকাতর তথ্য ছড়ানো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগজনক।

আইনি পদক্ষেপের দাবি উঠছে

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা না এলেও, নেটিজেনরা চাইছেন বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ জানাক এবং এমন গুজব ছড়ানো মাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

 

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, সামাজিক মাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্রতিটি তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্বাস করা উচিত নয়। বড় মাপের একটি গণমাধ্যমের এমন দায়িত্বহীন আচরণ সাংবাদিকতার নৈতিকতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ এ ঘটনায় যে দ্রুত এবং সুস্পষ্টভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। একইসাথে, নাগরিকদেরও সচেতন থাকতে হবে, যেন এমন গুজবে কেউ বিভ্রান্ত না হয়।

Aucun commentaire trouvé