close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন যুগ: শেখ হাসিনার পরবর্তী সতর্ক আশাবাদী সম্পর্কের পথচলা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একসময়কার তিক্ত সম্পর্ক এখন একটি নতুন পর্যায়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, দু’দেশ একে অপরের সঙ্গে ব
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একসময়কার তিক্ত সম্পর্ক এখন একটি নতুন পর্যায়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, দু’দেশ একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদার করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের কূটনীতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এবং এটি দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাকিস্তান-ভিত্তিক নতুন সম্পর্কের সূত্রপাত গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সাথে তিনি দুইবার সাক্ষাৎ করেছেন। এই পরিবর্তনটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধী সম্পর্ক একটি নতুন মোড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের বৈরী মনোভাব ছিল, তবে তার বিদায়ের পর পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। শক্তিশালী আঞ্চলিক সম্পর্কের পথে পদক্ষেপ বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের এই শিথিলতা অন্যান্য দেশের মধ্যে সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ভারত। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, "ভারত চাইলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারে।" তিনি আরও বলেন, "দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া শুধু বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকেও উপকারী হবে।" বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে পাকিস্তানকে ঘিরে কিছু আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন সম্পর্কে আশাবাদী। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির বলেছেন, "আগের মতো সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করা বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে।" জামায়াতে ইসলামীও একই মনোভাব প্রকাশ করেছে, তবে তাদের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের প্রাসঙ্গিকতা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি মুছে ফেলা সহজ নয়। ১৯৭১ সালের স্মৃতি এবং জনগণের উদ্বেগ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ভূমিকা বাংলাদেশের জনগণের জন্য এখনও এক পীড়াদায়ক স্মৃতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুস্তাফা মুশফিক তালুকদার বলেন, "পাকিস্তানকে আগে ১৯৭১ সালের ঘটনাগুলোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।" একই মতামত প্রকাশ করেছেন গবেষক তামিম মুনতাসীর, যিনি মনে করেন যে, পাকিস্তানকে যথাযথভাবে ক্ষমা চেয়ে সম্পর্কের পথে আরও অগ্রসর হতে হবে। আঞ্চলিক অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও অগ্রসর হতে শুরু করেছে। ঢাকায় পাকিস্তানি সিনেমা প্রদর্শন এবং পাকিস্তানে বাংলাদেশের সিনেমা প্রদর্শন এমন উদ্যোগগুলো দুই দেশের জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করছে। আরও আশ্চর্যজনক হলো, পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে, যা বাণিজ্যিক সম্পর্কের উত্তরণের একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। ক্রিকেট এবং জনগণের সাদৃশ্য বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের জনগণ উভয়ই ক্রিকেটে একে অপরকে সমর্থন করে, যা একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক মিলনের প্রতীক হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, "ক্রিকেটে আমাদের সাদৃশ্য অনেক গভীর, এটি দুই দেশের জনগণকে একত্রিত করতে পারে।" তিনি মনে করেন, এই সাদৃশ্য রাজনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উপসংহার: সতর্ক কিন্তু আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তবে জনগণের মনোভাব এখনও সতর্ক। বিশেষত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্পর্কিত সমস্যাগুলি এবং পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা না চাওয়ার কারণে কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায়টি যেকোনো ক্ষেত্রে একটি আশাবাদী এবং গতিশীল পরিবর্তনের প্রতীক হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে আসবে।
No comments found


News Card Generator